স্ট্রেস মানেই নেগেটিভ নয়
স্ট্রেস কথাটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হলেও কখনো কখনো ইতিবাচক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। স্ট্রেস কথাটি বর্তমানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হলেও স্ট্রেস-কে শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন কাজ। একটি বিষয় জেনে রাখা উচিৎ, প্রতিদিনের কাজের প্রেসার আর স্ট্রেস আলাদা — বিজ্ঞানেরচিন্তা মতে প্রতিদিনের টুকিটাকি চাপকে কিন্তু স্ট্রেস বলে না। একটা নির্দিষ্ট মাত্রাতে পৌঁছানোর পরে তাকে স্ট্রেস বলে গণ্য করা হবে। স্ট্রেস কাকে বলে ? কিভাবে স্ট্রেস হয় ? এর ফলে কি হতে পারে? স্ট্রেস কত প্রকার? ভালো মন্দ নানান দিক? সেই ব্যাখ্যা গুলো যদি সংক্ষেপে বলা যায় তবে স্ট্রেস কথাটির অর্থ পরিষ্কার হবে
* স্ট্রেস সাধারণ জীবনে নানান বাঁধা সৃষ্টি করে, স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মূলত মানুষের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক মানসিক নানান চাপের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় স্ট্রেস এবং তা শারীরিক এবং মানসিকভাবে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করে।
* স্ট্রেস কম বেশি আমরা সবাই কমবেশি অনুভব করি। মানুষের মন ঠিক কোথায় অবস্থিত, সেটা এক কথায় বলা খুব কষ্ট, কিন্তু স্ট্রেসের প্রভাব কিন্তু শরীরের সর্বত্র কমবেশি পড়ে। কিন্তু কীভাবে? মূলত যে দুটো হরমোনের মাধ্যমে এই প্রভাব শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তা হলো:
১-এন্ডোক্রিন বা হরমোন সিস্টেম
২-ইমিউন বা প্রতিরক্ষা সিস্টেম
হরমোন হলো শরীরের সেই রাসায়নিক যা কোনো গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে সাধারণত উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে অন্য কোনো অঙ্গের উপর ক্রিয়া করে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির প্রকাশ ও তাদের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে হরমোনগুলির কার্যকারিতা সাধারণত একে অন্যের উপর পারস্পরিক ভাবে নির্ভরশীল, অর্থাৎ, একটির বেশী কম নিঃসরণের উপর অন্যটির নিঃসরণ ও সেই মত কাজ করা নির্ভর করে। ( সূত্র – বিজ্ঞান )
স্ট্রেসকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মূলত তিনভাগে ভাগ করা হয় –
১- শারীরিক ২- মানসিক ৩- সামাজিক
শারীরিক স্ট্রেসের ক্ষেত্রে শরীরের মাঝখানের রেখাটি এমনিতেই খুব অস্পষ্ট, আর স্ট্রেস-এর প্রভাব মন ছাড়িয়ে শরীর অব্দি পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা থেকে শুরু করে ঘুম একদম না হওয়া, সর্বদা অবসন্ন লাগা, খিদে কমে যাওয়া, সহজে হজম না হওয়া, ইত্যাদি রোগগুলির বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্রেস-এর ফলে মানসিক অশান্তি, অল্পেতেই মেজাজ হারানো, খিটখিটে ভাবের উৎপত্তি, কাজে উৎসাহ না পাওয়া থেকে শুরু করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, কাজের ক্ষেত্রে ভুল করা প্রভৃতি।
সামাজিক ক্ষেত্রে স্ট্রেস-এর প্রভাব বোধহয় সবথেকে বেশি পড়ে। সম্পর্কে জটিলতা থেকে ক্রমাগত সম্পর্কের ভেঙ্গে যাওয়া, বন্ধুহীনতা, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এইরকম নানান ধরনের জটিলতা আসতে থাকে। ( সুত্রঃ বিজ্ঞান)
প্রথমেই বলি পজিটিভ স্ট্রেসের কথা
ধরুন আজ বিকালের মধ্যে আপনাকে একটা কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এতটুকু সময় যথেষ্ট নয়। তখন আপনি এক ধরনের স্ট্রেসে ভোগেন। এই স্ট্রেসে আপনার কর্মোদ্দীপনা বেড়ে যায় ও আপনি দ্রুত কাজ করেন। মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন বা কারও সাহায্য প্রার্থনা করেন। যারা একটু আলসে স্বভাবের তাদের জন্য তা নেগেটিভ স্ট্রেসে পরিণত হতেই পারে। কিন্তু পেশাগত জীবনে পজিটিভ স্ট্রেসও লাগে। এই স্ট্রেস তখনই আপনায় নিস্তার দেবে যখন কাজ শেষ হবে। আর তখন আপনার মনে এক ধরনের সুখানুভূতি কাজ করবে। তাই পজিটিভ স্ট্রেসও আপনার জন্য জরুরি।
এবার আসি নেগেটিভ স্ট্রেসের কথাতে
নেগেটিভ স্ট্রেস আপনার শরীরের ওপর ব্যাপক চাপ ফেলে। হজমে সমস্যা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, হজমে গোলযোগ, কোনোকিছুতে মন না বসা, কাজে অনীহাসহ আরও অনেক সমস্যা এই নেগেটিভ স্ট্রেসে হয়ে থাকে। এই স্ট্রেসটিকেই কর্মজীবনে মানুষের অবসন্নতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই নেগেটিভ স্ট্রেস আপনাকে সবসময় খারাপ রাখে। কিছুই ভালো লাগে না। ফ্রয়েডও এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কাজ করেছেন। তবে নেগেটিভ স্ট্রেসের ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যক্তি নিজেই কিছু বিষয়ে অস্বীকার করার মনোভাব রাখেন জেদ ধরে। তারা কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আগপিছু ভাবেন ও আটকে থাকেন। অপ্রীতিকর হলেও এসব বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে যাওয়া ভালো।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কের মতো ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে পজিটিভ ও নেগেটিভ স্ট্রেসের প্রভাব বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। যিনি স্ট্রেসে আক্রান্ত হন তিনি অনেক সময় মনে করেন এই জায়গাটি ক্ষুদ্র ও এটি মূল সমস্যা নয়। ফলে প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব পড়ে। দুটো আলাদা ভাগে ভাগ করার ফলে দুটো ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে। যারা মূলত ভাবনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখেনি তারা দ্রুত মানসিক শান্তি ও কর্ম-স্পৃহা ফিরে পেয়েছে। আর যারা নিজেদের ভাবনাকে ঝুলন্ত রেখেছে তাদেরই পড়তে হয়েছে হতাশার বৃত্তে। (সূত্র: হেলথইন