যে মশলা কমাবে পিঠের ব্যথা
আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য সমস্যা আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অনেকেই পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা প্রকট হলেও এখন এটি তরুণদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করা, ব্যায়ামের অভাব কিংবা সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে পিঠের ব্যথা মানুষের জীবনে এক সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ব্যথা কমাতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই ধরনের ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর চেয়ে যদি প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধান পাওয়া যায় তবে সেটা অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ।
দারুচিনি একটি বিশেষ মসলা যা শুধু রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধি করে না বরং এর রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্যগুণ। নিয়মিত দারুচিনি গ্রহণ করলে পিঠের ব্যথার মতো সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।
দারুচিনির গুণাগুণ
দারুচিনিতে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্যকর উপাদান। এতে রয়েছে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্কসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
প্রদাহ কমাতে সহায়ক
দারুচিনিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পিঠের ব্যথার একটি বড় কারণ হলো মাংসপেশি বা স্নায়ুর প্রদাহ। নিয়মিত দারুচিনি খেলে প্রদাহ কমে এবং ব্যথা উপশম হয়।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
শরীরের রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকলে ব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। দারুচিনি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পিঠের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে তোলে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি-র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। দারুচিনির এই গুণ শরীরকে দ্রুত আরোগ্যের পথে নিয়ে যায়।
হাড় ও স্নায়ুর যত্নে
দারুচিনিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে। এর ফলে পিঠের হাড় ও স্নায়ুর সমস্যা অনেকটাই দূর হয়।
পিঠের ব্যথায় দারুচিনির ব্যবহার
দারুচিনি অনেক রকম উপায়ে খাওয়া যায়। প্রতিদিন সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এটি পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
দারুচিনির চা
প্রতিদিন সকালে চায়ের মধ্যে দারুচিনি গুঁড়ো ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এই চা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে উজ্জীবিত করে তোলে।
রান্নায় দারুচিনি ব্যবহার
বাঙালিদের অনেক রান্নায় দারুচিনি ব্যবহার করা হয়। তরকারি, মাংস বা পোলাওয়ের মধ্যে এটি মেশালে স্বাদ যেমন বাড়ে তেমনি শরীরও উপকৃত হয়।
দারুচিনির পানীয়
এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি স্নায়ুকে শান্ত রাখে এবং ব্যথা উপশম করে।
মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ
এক চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে পিঠের ব্যথা কমে। এই মিশ্রণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে অন্যান্য পরামর্শ
দারুচিনির পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মেনে চললে পিঠের ব্যথা দূর রাখা সম্ভব।কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিমায় বসা খুবই জরুরি। চেয়ারের পিঠে ভর দিয়ে বসুন এবং কম্পিউটার বা টেবিলের উচ্চতা ঠিক রাখুন।নিয়মিত পিঠ ও কোমরের ব্যায়াম করলে ব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত।পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ব্যথার সমস্যা কমায়।
পিঠের ব্যথা সাময়িক সমস্যা মনে হলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দারুচিনির মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে ব্যথা উপশম হতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। প্রাকৃতিক পদ্ধতির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চললে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।