Skip to content

২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুখে থাকতে নিজেকে ছুটি দিন

মানুষের জীবনে কাজ ও দায়িত্বের চাপ প্রতিদিন বেড়ে চলেছে, আর এর মধ্যে আমরা প্রায়ই নিজেদের জন্য সময় বের করতে ভুলে যাই। আজকের ব্যস্ত জীবনে আমাদের প্রতিদিনের লক্ষ্য যেন একটাই—কাজ, আরও কাজ। প্রতিযোগিতামূলক এই দুনিয়ায় আমরা নিজের অজান্তেই নিজেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করি। কিন্তু কীভাবে আমরা সুখী হবো, যদি প্রতিনিয়ত এই চাপের মধ্যে ডুবে থাকি? কাজের ফাঁকে যদি নিজের জন্য একটু সময় না নিই, তাহলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সুখে থাকার জন্য শুধু সফলতা বা অর্থই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের মনের খেয়াল রাখা।

নিজেকে ছুটি দেওয়া মানে শুধুই শারীরিক বিশ্রাম নয়, বরং এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি। যখন আমরা নিজেকে সময় দেই, তখন মনের ভেতরের ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে গুরুত্ব দিতে শিখি। সেই ছোট ছোট আনন্দগুলোই আসলে আমাদের জীবনের বড় অংশ। ছুটির মধ্যে সময় কাটানো যেতে পারে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে, নতুন কিছু শিখতে কিংবা শুধুমাত্র নিজের প্রিয় কাজে ডুবে থাকতে। এই ছুটি আমাদের মনের ওপর চাপ কমায় এবং আবারও নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি দেয়।

একটানা কাজ করার ফলে শরীর ও মন দুটোই ক্লান্ত হয়ে যায়, কিন্তু আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না। যেমন, যদি কোনো যন্ত্রকে দিনের পর দিন চালিয়ে রাখেন, সেটা এক সময় ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। তেমনি আমরাও যদি বিরতি না নিই, আমাদের মনও ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। ক্লান্তি শুধু কাজের মানকেই কমিয়ে দেয় না, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত বিরতি বা ছুটি নেওয়া শরীর ও মনের পুনরুজ্জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আপনার মন যখন বিশ্রাম নেয়, তখন নতুন চিন্তাভাবনা বা নতুন আইডিয়া আসার সুযোগ পায়। যেমন, অনেক সময় আমরা কোন সমস্যার সমাধান খুঁজে পাই না, কিন্তু যখন একটু বিরতি নিই, তখন হঠাৎ করেই সমাধান মাথায় আসে। এর কারণ হলো, মস্তিষ্ককে সবসময় চাপ দিলে তা ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। ছুটি নিলে আপনি নতুন চিন্তা করার জায়গা পান, যা সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে এবং আপনার কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

কাজের চাপ থেকে সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ, যা দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। অবসাদ, উদ্বেগ, হতাশা—এসব মানসিক সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত কাজের চাপ। ছুটি নেওয়া মানে শুধু শারীরিক বিশ্রাম নয়, মানসিক চাপও কমানো। ছুটি নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো, বই পড়া, অথবা শুধু নিজের পছন্দের কাজ করে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে আমাদের মস্তিষ্ক শিথিল হয় এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে।

ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই প্রিয়জনদের জন্য সময় বের করতে পারি না। এর ফলে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছুটি নিয়ে যখন আপনি পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, তখন সেই সম্পর্কগুলো আবারও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে একসঙ্গে খাবার খাওয়া, কথা বলা, বা একসঙ্গে কোনো কাজ করা—এসব আপনার সম্পর্কের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে। ছুটির সময় আপনি পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে ভালো সময় উপভোগ করতে পারবেন, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

নিজের জন্য ছুটি মানে নিজের মধ্যে ঢুকে নিজের চাহিদা, স্বপ্ন, এবং ভালো লাগাগুলো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা। আমরা জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে নিজেদের সময় দিতে ভুলে যাই। কিন্তু যখন আপনি নিজেকে একটু ছুটি দেন, তখন হয়তো নতুন কোনো শখ আবিষ্কার করবেন, বা এমন কিছু করতে আগ্রহী হবেন যেটা আগে কখনও করার সময় পাননি। এটা হতে পারে ছবি আঁকা, বই লেখা, গাছের যত্ন নেওয়া বা কোনো নতুন দক্ষতা শেখা। এভাবে নিজের ভেতরের শক্তি ও সৃজনশীলতাকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন আসে, বাস্তবে কীভাবে এই ছুটি নেওয়া যায়? সবসময় হয়তো বড় ছুটি নেওয়ার সুযোগ হবে না। তবে দিনের মধ্যে বা সপ্তাহে কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করে রাখতে পারেন। যেমন, প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে ১০-১৫ মিনিটের জন্য হলেও একটু হাঁটতে বের হওয়া, মনের মতো বই পড়া, বা গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে রিলাক্স করা। এছাড়া মাসে এক-দুই দিন পুরোপুরি নিজের জন্য রাখুন—যেখানে আপনার কাজের কোনো চাপ থাকবে না, বরং আপনি যা ভালোবাসেন সেটাই করবেন। ছোট ছোট ছুটি দীর্ঘমেয়াদি প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

নিজেকে ছুটি দেওয়া মানে শুধু বিশ্রাম নয়, নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। আমরা যদি সুখে থাকতে চাই, তাহলে কাজের পাশাপাশি নিজেদেরকেও ভালো রাখতে হবে। নিয়মিত ছুটি নেওয়ার অভ্যাস আমাদের কর্মক্ষমতা এবং জীবনকে আরও সুন্দর এবং সুখী করে তুলতে পারে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ