ছাদবাগান, মাথার উপর একচিলতে ছাদ

১০ তলা ভবনের ছাদে সারি সারি গাছের সমারোহ। কোনো ছাদে চাষ হয়েছে সবজির, কোথাও ফুলের বাগান, এমনকি কলা গাছের চাষও চোখে পড়বে আপনার৷ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ছনটেক এলাকায় এ ধরনের দৃশ্য দেখবেন আপনি। শুধু যাত্রাবাড়ী কিংবা রাজধানী নয়, সারাদেশে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদবাগান। কোথাও এক চিলতে শূন্য জায়গা পেলেই তাকে সাজিয়ে তুলতে চায় নানাভাবে। আর এমন সাজিয়ে তোলার জন্য চাইলেই ছাদে করে ফেলতে পারেন ছোট্ট করে বাগান।
আধুনিক নগর জীবনে যখন কোথাও সবুজের দেখা মিলেনা, সেখানে ছাদবাগান এনে দিতে পারে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া। ছাদে প্রায় সব ধরনের গাছ লাগানো যায়। ছোট–বড় বিভিন্ন আকারের গাছ আজকাল দেখা যায়। ফলের ভেতর পেয়ারা, আপেল, লেবু, আম। ফুলের ভেতর কসমস, সালভিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমুখী, সূর্যমুখী ইত্যাদি দেখা যায়। শীতকালে পিটুনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সালভিয়া ইত্যাদি ফুল দেখা যায় বেশি। এ ধরনের ফুলগুলো শুষ্কতায়ও সতেজ থাকে।
তরুণরা আগ্রহী বেশি:
ছাদবাগানে সবজি ও কৃষি ফসল আবাদ নিয়ে মধ্যবিত্ত ও বয়স্কদের চাইতেও বেশী আগ্রহ তরুণদের। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ঢাকার মিরপুর–১০ এলাকার ১০০টি পরিবার নিয়ে করা জরিপে দেখা যায়, ছাদবাগান করতে আগ্রহীদের ৪১ ভাগ তরুণ, ৩০ ভাগ মধ্যবয়সী এবং ২৮ ভাগ বয়স্ক মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণ করা মানুষজন ফসলের মধ্যে অর্নামেন্টাল, ঔষধি, ছোট হার্ব–জাতীয় ফসলের চাষাবাদ করতে পছন্দ করেন। ২য় স্থানে ফল এবং ৩য় স্থানে সবজি আবাদের পরিমাণ।
যেভাবে চাষ করবেন:
মাটির টব, প্লাস্টিকের বোতল অথবা বালতিতে গাছ লাগিয়ে শুরু করতে পারেন ছাদবাগান। গাছে পানি দেওয়ার উত্তম সময় ভোরে অথবা সন্ধ্যায়। সুতরাং ভোরে ঘুম থেকে উঠে ও সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে যত্ন নিতে পারেন নিজের বাগানের। নার্সারিগুলোতে ছাদবাগানের উপযোগী বিভিন্ন রকমের গাছের চারা, সার, কীটনাশক ইত্যাদি পাওয়া যায়। ছাদবাগানের যত্নও নিতে হবে নিয়ম মেনে।
সবজি চাষের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপদ বা জৈবভাবে সবজি বা ফল চাষ করা । নিরাপদ সবজি চাষে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো–
মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা:
বাগান করতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করবে গাছের বেড়ে ওঠা। ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত সার, বায়োচার ইত্যাদি মাটি শোধন বা হাইজিন করতে ভালো উপাদান। চাইলেই ব্যবহার করতে পারেন এসব উপাদান।
জৈব সার:
টবে মাটি ভর্তি করার আগে মাটির সাথে মেশাতে হবে জৈব সার৷ এর ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। ভার্মি কম্পোস্ট, রান্নাঘর ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে বানানো সার, চা–কম্পোস্ট, ডিম খোসা ভাঙা মিশানো, নতুন মাশরুম কম্পোস্ট (পটাশ ও ফসফরাস আধিক্য), নিম খৈল, সরিষা খৈল ইত্যাদি ছাড়াও যে কোনো বায়োলজিক্যাল কম্পোস্ট (ব্যাকটেরিয়াবিহীন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোগ–পোকামাকড় দমন:
নিরাপদ সবজি চাষে রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে হবে নিয়ম মেনে; শাকজাতীয় সবজিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও চলে কিন্তু ফলজাতীয় সবজি চাষে সবজি আহরণের কমপক্ষে ২০ দিন আগে থেকে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করা।
পোকা দমনে ফ্লাইং ইনসেক্টের জন্য ফেরোমন ট্রাপ, সোলার লাইট ট্রাপ, আঠালো (Sticky trap) ট্রাপ, পেঁয়াজ পাতার ও ছোলা পেস্ট বা নির্যাস, রসুন, গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকার (সর্বাধিক কার্যকরী–ফুলের দোকানে ফেলে দেয়া ফুল সংগ্রহ করে) ফুলের নির্যাস ভালো কাজ করবে।
পার্চিং:
ছাদবাগানে পাখি বসার জায়গা করে দেয়া ভালো। বাগানের ফল–সবজি তখনই পাখি খাবে যখন তা নিরাপদ ও বিষমুক্ত থাকবে। এরা অনেক পোকামাকড়ও খাবে। পাখিকেও খেতে দিন তাহলেই তো নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে টেকসই পরিবেশ রক্ষা হবে সবার জন্যই।
নিরাপদ ছাদবাগানের নিরাপত্তা:
ছাদ কার্নিশ বা ব্যালকনিতে পটে বা টবে ফুল–ফল–সবজি আবাদে সতর্কতা অবলম্বন করুন যাতে বিল্ডিং বা এপার্টমেন্টের নিচ দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারী দুর্ঘটনার শিকার না হন।
এমন শৈল্পিক কাজের কারিগরি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএই, এআইএস, ফ্যাব–ল্যাবে।