উদ্ভিদের ‘দক্ষতা’ বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চেষ্টা
বিজ্ঞানীরা এবার উদ্ভিদের সহজাত ক্ষমতার উন্নতির মাধ্যমে কার্বন-ডাই অক্সাইড ধারণ ও অক্সিজেন সৃষ্টির কাজ আরো দ্রুত ও কার্যকর করতে চাইছেন। এমনকি রাসায়নিক শিল্পের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে পারে সেই প্রযুক্তি।
প্রফেসর টোবিয়াস অ্যার্বের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য রয়েছে। তিনি প্রকৃতির উন্নতি করতে চান৷ আসলে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে সালোকসংশ্লেষণের দিকে নজর দিচ্ছেন। পৃথিবীর জীবজগত এই প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে রয়েছে। প্রো. অ্যার্ব বলেন, ‘‘সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বিশেষ ভালোভাবে চলে না, মানুষ হিসেবে এমনটা দাবি করা যেতেই পারে। গাছপালা কিন্তু সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের চাহিদা একটু বেশি। আমরা আসলে কম উদ্যোগে বেশি কিছু হাসিল করে দক্ষতা বাড়াতে চাই। একদিকে সেই প্রণালী থেকে আরো কিছু বার করার প্রণোদনা রয়েছে৷ যদিও ৩০০ কোটি বছর ধরে সেটি বিকাশের সময় পেয়েছে৷ কিন্তু কেন এর উন্নতি হয় নি? এই প্রশ্ন অত্যন্ত মৌলিক৷ আমি কি একেবারে ভিন্নভাবে ভাবতে পারি?”
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আলো, পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সহজ এক কার্বন যৌগ, গ্লুকোজ ও অক্সিজেন সৃষ্টি হয়৷ গ্লুকোজ উদ্ভিদের মধ্যেই থেকে যায়, সেটির বৃদ্ধির কাজে সাহায্য করে৷ অক্সিজেন পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
‘উন্নত’ সালোকসংশ্লেষ?
টোবিয়াস সেই সার্কুলেশন বা চক্র, বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফিক্সেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগ্রহী৷ তার মতে, ‘‘সিওটু কীভাবে ধরে নিয়ে উপকারী যৌগে রূপান্তরিত করা যায়, সেটাই মৌলিক প্রশ্ন৷ আমি কীভাবে জড় কার্বন কোনো জৈব পদার্থে রূপান্তরিত করতে পারি? সেই মৌলিক প্রক্রিয়া নকল করা, নতুন করে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা বিশাল এই প্রশ্নের দার্শনিক মাত্রার মধ্যে পড়ে।”
এমন কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া গেলে কেমন হয়, যা প্রকৃতি কখনো পরখ করে দেখেনি? মানুষের হাতে আরো উন্নত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া যদি আরো অক্সিজেন ও আরো কার্বন যৌগ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে কেমন হয়?
উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে কাজ করে, টোবিয়াসকে সে দিকে আরো ভালোভাবে নজর দিতে হয়েছে৷ উদ্ভিদের মধ্যে রোবিস্কো নামের একটি এনজাইম কার্বন-ডাই-অক্সাইডের রূপান্তরের জন্য দায়ী৷ প্রো.অ্যার্ব বলেন, ‘‘সেই এনজাইম সেকেন্ডে প্রায় পাঁটটি সিওটু অণু নিয়ে কাজ করে৷ সেই গতি কিন্তু যথেষ্ট নয়৷ উদ্ভিদের ক্ষমতা সত্যি সীমাবদ্ধ থাকে৷ উদ্ভিদ সেকেন্ডে ১০০ সিওটু অণু গ্রহণ করতে পারলে কেমন হতো?”
ফলে এমন এনজাইমের সন্ধান করা হলো, যা আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে৷ তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে এমন এনজাইম শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলতে লাগলো৷ তারপর এক ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে উপযুক্ত এনজাইম পাওয়া গেল৷ সেটি আসলে অ্যাসিটিক অ্যাসিডের চক্রের মধ্যে কাজ করে৷
পরীক্ষায় দেখা গেল, ইসিআর নামের সেই এনজাইম রুবিস্কোর তুলনায় অনেক ভালো কাজ করে৷ সিওটু কমানো এবং কার্বন যৌগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সেটি অনেক বেশি কার্যকর৷ প্রো. টোবিয়াস অ্যার্ব-এর মতে, ‘‘ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়৷ একদিকে আমরা সিওটু কমাচ্ছি৷ অন্যদিকে প্রয়োজনীয় এক পণ্য সৃষ্টি করতে পারছি, যা প্রকৃতির হস্তক্ষেপের তুলনায় অনেক জটিল৷”
প্রোটোটাইপ সৃষ্টি হয়ে গেছে৷ সেই সব এনজাইম যেন স্যুপের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে৷ এবার সেই অপারেটিং সিস্টেম জীবন্ত উদ্ভিদের মধ্যে ঢোকানোর পালা৷ অ্যালজি বা সামুদ্রিক উদ্ভিদকে যদি সিওটু ধারণ করার এই উন্নত ক্ষমতা দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে অ্যালজির কারখানা বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে বড় আকারে অক্সিজেন ও মূল্যবান কার্বন যৌগ সৃষ্টি করতে পারবে৷ প্রো. টোবিয়াস অ্যার্ব বলেন, ‘‘এভাবে এমনকি রাসায়নিক শিল্পেও বিপ্লব আনা যাবে, কারণ সে ক্ষেত্রে রাসায়নিক সংশ্লেষণের জন্য আর খনিজ তেলের প্রয়োজন হবে না৷ আলোর মাধ্যমে ইচ্ছামতো সব পণ্যই সিওটু থেকে সৃষ্টি করা যাবে৷ সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই আমরা চলেছি৷”
ল্যাবের প্রাথমিক ফলাফল অনেক আশার আলো দেখাচ্ছে।
অনন্যা/এআই