Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফ্রিকার যাযাবরদের খাদ্য বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছেন শেফ

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো যাযাবর সম্প্রদায় টিকে রয়েছে৷ আফ্রিকার এমনই এক সম্প্রদায়ের খাদ্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারা তুলে ধরছেন এক নারী।

তাঁবুর মধ্যে অতিথিরা ফুলানি যাযাবরদের খাদ্য চেখে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ শেফ বা রাঁধুনী হিসেবে ফাতমাতা বিন্তা সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতিও তুলে ধরছেন৷ ফাতমাতা বলেন, ‘‘আজ আমি মাদুরের উপর বসে খাওয়ার অভিজ্ঞতা দিচ্ছি৷ ৩৫ জনের দল এসেছে৷ মূলত ফুলানি নারীদের প্রেরণার ভিত্তিতে আজ রাতে আমি চার কোর্স বা পদ পরিবেশন করছি৷ এই সব পদের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা যোগ করি৷ অর্থাৎ এই সব জায়গায় খাঁটি পদ পাবেন না, আমরা তাতে যথেষ্ট ফিউশন যোগ করি৷ আমরা স্মোকি ফ্লেভার, ফার্মেন্টেশন, সান ড্রাইয়িংয়ের মতো বিষয় যোগ করে পদগুলিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করি৷”

ফাতমাতা বিন্তা কেন নিজের রান্নায় প্রাচীন ফুলানি উপাদান ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, আমাদের খাবারের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য আনতে হবে৷ আমরা একটি বিষয়ের প্রতি বড় বেশি মনোযোগ দেই৷ ভাত খাওয়া ভালো ঠিকই৷ কিন্তু জানেন তো মিলেট অথবা ফোনিও খাওয়াও ভালো৷ আফ্রিকার এই সব উপকরণের বেশিরভাগই সুপার ফুড এবং সেগুলি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে৷ তাই আমি আমার মাদুর কাজে লাগিয়ে মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছি৷ সেই সঙ্গে তাদের খাদ্য ও সংস্কৃতি উপভোগের এক যাত্রায় শামিল করছি৷”

বিন্তা ফুড সিস্টেম অ্যাডভোকেট হিসেবে ফোনিও নামের প্রাচীন শস্য জনপ্রিয় করতে বেশ সক্রিয়৷ কিন্তু এই শস্যের প্রতি তাঁর বিশ্বাসের কারণ কী? ফাতমাতার মতেস ‘‘এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, খরা প্রতিরোধী, অত্যন্ত সহজে বেড়ে ওঠে৷ খুব বেশি পানিরও প্রয়োজন হয় না৷ এমনকি জমিতে বেশি লাঙ্গলও চালাতে হয় না৷ খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে আমি এটিকে সমাধানসূত্র হিসেবে দেখি৷তাই আমি ফোনিওর হয়ে খুব ওকালতি করি৷”

আফ্রিকার যাযাবর শেফ ফাতমাতা
আফ্রিকার প্রথম মানুষ হিসেবে বাস্ক কুলিনারি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন বিন্তা৷ তাঁর পিতামহরা ফুলানি যাযাবর ছিলেন৷ নিজেদের গবাদি পশুর খোরাকের সন্ধানে তাঁরা বিস্তীর্ণ এলাকা চষে বেড়ান৷ আফ্রিকার মধ্য ও পশ্চিম অংশে দুই কোটিরও বেশি এমন যাযাবর আছেন৷

কিন্তু শেফ বিন্তা কেন ফুলানি রন্ধনপ্রণালী বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে আগ্রহী? কেনই বা তিনি সেই অভিজ্ঞতাকে ‘ডাইনিং অন এ ম্যাট’ বলেন? ফাতমাতা বলেন, ‘‘এটা আফ্রিকার প্রাচীন সংস্কৃতি৷ আমার মতে, মানুষ এভাবে বসে৷ আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলে খেতে বসে এবং পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে৷ মেঝেতে বসে হাতে করে খেলে কোনো চাপ থাকে না৷ কোনো কড়া আদবকায়দা মেনে চলতে হয় না৷ ফলে আরাম করে খাওয়ার অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়৷ পাশে বসা মানুষটিকে চেনা যায়৷ এটাই হলো গিনি কোনাক্রির প্রেরণায় ফুলানি স্টাইল, প্রতীচ্যের শৈলি৷ আসুন, মসালাদার মাংসের কলিজা দিয়ে শুরু করা যাক৷”

এমন ভোজে অংশ নিয়ে ভিক্টোরিয়া সান্টোস বেশ আপ্লুত৷ তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম আমি এমন কিছু করছি৷ তিনি যে খাবারের জন্য এত সময় ও শ্রম দিয়েছেন, প্রত্যেকটি পদ আলাদা করে জোগাড় করেছেন, তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ৷ কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবো! সবই কত সুস্বাদু! ফলে খাবার ভাগ করে নিয়ে দলের মধ্যেও সুন্দর সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ সবাই স্বাদের তারিফ করছে, নিজেদের মুগ্ধতা প্রকাশ করছে৷”

শেফ বিন্তা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক দূত ও অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন৷ প্রাচীনকালের শস্য কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চান তিনি৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ