‘এ লাল রং কব মুঝে ছোড়েগা’
সত্তর বছরে পা রাখলে তাকে কী বলে জানি না। সৃষ্টিকর্তা চাইলে দশ বছর পর আশিতে পা রাখব, যাকে বলে অশীতিপর। এই বয়সে এসে জীবনের সবচাইতে রঙিন সময়ের কথা বেশি মনে পড়ে। আর সেই সময়গুলোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আমাদের দেশের ইতিহাস। সেই ইতিহাস-বীক্ষণ আমার চোখ দিয়ে পাঠককে একটু দেখাতে চাই। আজ জাতীয় শোক দিবস। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর পরিবার আমাদের জীবনে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু তার সন্তানদের কতখানি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বাঙালি সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে মানুষ করেছিলেন, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ছিল শেখ কামাল ও শেখ জামাল এবং তার দুই কন্যা। শেখ হাসিনা রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ করতেন এবং আম নিজের হাতে ভর্তা করে বাড়ির অতিথিদের জন্য নিজের হাতে পরিবেশন করতেন। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল অত্যন্ত চৌকশ ছিলেন। কিন্তু সবচাইতে আকর্ষণীয় ছিলেন শেখ জামাল। হাসিনা ও রেহানা আর দশটা বাঙালি মেয়ের মতোই অত্যন্ত মায়াময়, আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ।
শেখ কামালকে দিয়েই এই স্মৃতিচারণ শুরু করা যাক। শেখ কামাল আমার সহপাঠী ছিলেন। আমি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—শেখ কামালের মতো ভদ্র ও অমায়িক এবং একজন বন্ধুবত্সল মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমার সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। কিন্তু আমি কোনো দিনও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র খারাপ জিনিস দেখিনি। যদিও শেখ কামাল আমার চাইতে দুই বছরের বড় ছিলেন। আমাদের ফিলোসফি পড়াতেন জিসি দেব স্যার আর ইসলামের ইতিহাস পড়াতেন গিয়াসউদ্দিন স্যার। এ দুটো ক্লাসে আমি সহপাঠী হিসেবে শেখ কামালকে পেয়েছি। শেখ কামাল ছিলেন অত্যন্ত প্রাণপ্রাচুর্যপূর্ণ মানুষ। দুষ্টুমি করতেন। মজা করতেন। যেমন—ক্লাসে যখন টিচার আসতেন, আমি একদিন খেয়াল করলাম, কিছু ছাত্র একসঙ্গে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে মেঝেতে ঘষে অদ্ভুত একটা শব্দ করছে। আসলে এটা ছিল শেখ কামালের শিখিয়ে দেওয়া একটা দুষ্টুমি। তারপর স্যার যেই সবার দিকে কড়া চোখে তাকাতেন, অমনি শব্দ থেমে যেত। কামাল এমনই মজার ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন বদরুন্নেসা। তার ছেলে ছিলেন রতন। নুরুদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ছিলেন বদরুন্নেসা আহমেদ। ওনার নামে আজিমপুরে বদরুন্নেসা কলেজ তৈরি হয়। রতন আর শেখ কামালের বাসা পাশাপাশি ছিল। ১৯৬৯ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন এই নুরুদ্দিন আহমেদের ছেলে রতন একদিন একটা অনভিপ্রেত কাণ্ড ঘটিয়ে বসল। বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডরে হঠাত্ আমার কাছে এসে রতন বলল, একটু দাঁড়াও। আমি দাঁড়ালাম। রতন অকস্মাত্ আমাকে বলে বসল—আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে কমনরুমে ঢুকে গেলাম। শহীদুল্লাহ মুন্সী স্যার আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমার ঘনিষ্ঠ সহপাঠিনী ইয়াসমিন করিম একদিন ক্লাসে জানালার কাছ থেকে সরে গিয়ে আমাকে বলল, তুই এদিকে বোস। এই বলে সে জানালাটা খুলে দিল। তখন রতন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নিয়ে এসে ঐ জানালা দিয়ে আমাকে দেখাল। মঞ্জুর সঙ্গে শেখ কামালও ছিলেন। আমি এখন বুঝতে পারি, মঞ্জুর পরিকল্পনায় এরা আমাকে আগে থেকেই ফলো করত এবং রতন আমাকে আসলে পরীক্ষা করে দেখেছিল, ভালোবাসার কথা বললে আমি কী প্রতিক্রিয়া দেখাই।
তারপর মঞ্জুর মা আমাকে পছন্দ করলেন এবং বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিনের বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী, যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সচিব, তার শ্বশুর বিচারপতি সিকান্দার আলী সাহেবের বাড়িতে আমার ব্যাপারে মঞ্জু খোঁজখবর নিলেন। ঐ বাড়িতেই আমার পাকা দেখা হয়। রফিকুল্লাহ চৌধুরী রাঙ্গামাটিতে কিছুদিন কাজ করেছেন, যেখানে আমার বাবাও কর্মরত ছিলেন। সে কারণে তাদের কাছে আমার ব্যাপারে অনুসন্ধান করলেন। মঞ্জু তখন ফজলুল হক মুসলিম হলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ছাত্রলীগের দাপুটে নেতা। আর শেখ কামাল তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। এটা ১৯৬৯ সালের ঘটনা। ঐ বছরের পয়লা জুন মঞ্জুর বাবা মানিক মিয়া সাহেবের অকস্মাত্ মৃত্যু হয়। তাঁর অকালপ্রয়াণের প্রায় ৯ মাস পর আমার বিয়ে হয় মঞ্জুর সঙ্গে, ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এনগেজমেন্ট হয়েছিল তার আগের মাসে, জানুয়ারিতে।
আরও পড়ুন: একজন শেখ হাসিনা এবং আমরা
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার অত্যন্ত সৌভাগ্যময় কিছু স্মৃতি আছে। বনানীর ৬ নম্বর রোডে, আমাদের বাড়িতে মুজিব কাকা (তখনো বঙ্গবন্ধু উপাধি পাননি) আমার বাবাকে বললেন, তাজ ভাই, আমরা আপনার মেয়েকে নিলাম। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। মুজিব কাকাই বিয়ের এনগেজমেন্টের আংটিটা আমার হাতে পরিয়ে দিলেন। আমার ভাশুরও তখন সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে আমার বড় বোনের স্বামী আমার এই বিয়েতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, শেখ মুজিব আর তার পক্ষের লোকজন দেশে (তত্কালীন পাকিস্তানের) গোলমাল বাধায়। এদের কাছে মেয়ে দেওয়া যায় না। তিনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বড় কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি অবশ্য আমার বিয়ের আগেই ১৯৬৯ সালে রিটায়ার করেন। তবে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার শ্বশুরদের পাকিস্তানের জন্য ভালো মনে করতেন না। পৃথিবীতে কাকে যে কখন প্রয়োজন পড়ে একমাত্র আল্লাহ জানেন। মঞ্জু যখন একাত্তরের এপ্রিলে গ্রেফতার হয়, তখন আমার এই দুলাভাই-ই তাকে মুক্ত করার ব্যাপারে ক্যান্টনমেন্টে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। সে সময় মঞ্জুকে দুজন পাকিস্তানি অফিসার এসে বারবার জেরা করত এবং বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করেছিল। এদের ধারণা ছিল, মঞ্জু ছাত্রলীগের বড় নেতা এবং শেখ কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, সেজন্য তাকে জেরা করলে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া যাবে।
আমাদের বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুতেই শেখ কামাল হই-হুল্লোড় করে বেড়িয়েছেন। মজার মজার বুদ্ধি এঁটে কত ধরনের যে কাণ্ড করেছেন শেখ কামাল! একটি মজার ঘটনা মনে পড়ছে। তখন তো আর পানি ওঠানোর জন্য পাম্প ছিল না, আমাদের নিচের রিজার্ভ ওয়াটার ট্যাংকিতে কামাল দুষ্টুমি করে রং মিশিয়ে দিলেন। পরদিন আমরা কেউ আর গোসল করতে পারলাম না। আমাদের গেন্ডারিয়ার বাড়িতে হলুদের তত্ত্ব নেওয়া দলের সঙ্গে শেখ হাসিনাও ছিলেন। ছাত্রলীগের দুরন্ত কর্মী হিসেবে আর মানিক মিয়ার ছেলে হওয়ার কারণে মঞ্জুকে মুজিব কাকা আর ফজিলাতুন নেছা কাকিমা অসম্ভব ভালোবাসতেন। মানিক মিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এমনই বন্ধুত্ব ছিল যে, এরা ছিলেন অভিন্ন পরিবারের মতো। এজন্য শেখ হাসিনা আমাকে বলেন যে, তুমি তো আমাদের বাড়ির প্রথম বউ।
১৯৭০ সালের কথা। ডাকসুর নির্বাচন হচ্ছিল। আমি টিভি দেখছিলাম। হঠাত্ দূর থেকে দেখি একজন লম্বা গড়নের লোক লুঙ্গি পরে হেঁটে হেঁটে আমাদের বাড়িতে ঢুকলেন। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখি, মুজিব কাকা! ওনার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। উনি এসে বললেন, মঞ্জু কই? আমি লাফ দিয়ে উঠে মঞ্জুকে ডাকতে গেলাম। এদিকে মঞ্জু কোন ফাঁকে বেরিয়ে গেছে, আমাকে বলেও যায়নি। মঞ্জু নেই শুনে উনি আমার শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে তখনই বেরিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: ‘দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে!’
আমার বিয়ের পরের বছর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের তিন-চার দিন পরে শেখ কামাল আমাদের বাড়িতে এসে দুই দিন ছিলেন। যাওয়ার সময় কামাল আমাকে একটা ছোট্ট পিস্তল দিয়ে গেলেন। পিস্তলটি ছিল খুব সুন্দর দেখতে। সাদা আইভরির মতো কারুকাজ করা, হ্যান্ডেলটা একটু সোনালি রঙের। কামাল বললেন, ‘ভাবি, এটা রেখে দেন।’ আমি এটা আমার ঘরের বেডসাইডের কার্পেটটা উঠিয়ে এর পাশের সাইড টেবিলের নিচের দিকে রেখে দিলাম। তারপর তো এপ্রিলের প্রথম দিকে কামাল সীমান্ত টপকে চলে গেলেন। তখন সোবহানবাগ মসজিদের নিচে অ্যাম্বাসেডর নামে একটি টেইলারের দোকান ছিল। ঐ টেইলার হাইপ্রোফাইল লোকদের জামাকাপড় বানিয়ে দিত। আমরা তো দেশ ছাড়িনি। কিন্তু ওপার থেকে যত চিঠি আসত, সব আসত ঐ দোকানে। দেশ বিজয়লাভের পরে ৬ জানুয়ারি শেখ কামাল দেশে এসে আমার প্রথম মেয়ের প্রথম জন্মদিনে আমাদের বাড়িতে এলেন। তখন ওনারা ধানমন্ডি ১৮ নম্বরে থাকতেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর আমরা ওনার বাড়িতে যখন দেখা করতে গেলাম, তখন উনি আমার শাশুড়িকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। চাশমা খুলে চোখ মুছলেন। তারপর বললেন, ‘ভাবি, আজকে মানিক ভাই বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। মানিক ভাইয়ের জন্য কিছু করতে হবে। বঙ্গবন্ধু তখনই বললেন, পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় রাস্তা আমি মানিক ভাইয়ের নামে করব।’ আমি তখন ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঘরভর্তি অনেক নেতা। মঞ্জু তখন সেখানে অন্যতম তরুণ নেতা। সেখানে পতাকার ডিজাইন, জাতীয় সংগীত ইত্যাদি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করছিলেন।
বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিনি ছিলেন বাঙালির আদর্শ নারী, সর্বংসহা। তাকে আমি কাকিমা বলে ডাকতাম। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি খুব সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। খাওয়ার ঘরের একপাশে ছিল একটি ডাইনিং টেবিল আর দুই মাথায় দুটো চেয়ার। একসঙ্গে খুব বেশি হলে চারজন বসতে পারত। আমাকে দেখলে বলতেন, বৌমা আইছনি? তিনি নিজের হাতে রান্না করতেন এবং কখনো না খাইয়ে যেতে দিতেন না। তিনি একটা সুতি শাড়ি পরে থাকতেন। কাকিমাকে আমার মনে হয়েছে অত্যন্ত মাতৃসুলভ গৃহিণী। তিনি তার ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে আসতেন। দুজনে বসে পান খেতেন। গল্প করতেন। রাসেলকে ভাত খাওয়ানোর জন্য তিনি ডিম ভাজলেন এবং সেখানে একটুখানি চিনি ছিটিয়ে দিলেন। সেই প্রথম আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যে ডিমভাজার মধ্যে চিনিও দেওয়া যায়! ছোট্ট রাসেল তখন চার-পাঁচ বছরের। ভীষণ মিষ্টি আর আদুরে ছিল শেখ রাসেল। আহা! মাত্র ৯ বছর বয়সে এমন মায়াবী মুখের ছেলেটির জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল নৃশংস ঘাতকেরা!
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর গলব্লাডারের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। গলব্লাডারের অপারেশনের আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার হঠাত্ ঘটনাক্রমে দেখা হয়ে যায়। আমি সে সময় একদিন আমার মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাত্ একটি গাড়ি এসে আমার পাশে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে মনি ভাইয়ের মা (বঙ্গবন্ধুর বোন) আমাকে দেখে বললেন, কোথায় যাবা? আমি মোহাম্মদপুরের কথা বলতেই উনি আমাকে ও মেয়েকে গাড়িতে তুলে নিলেন। তো উনি প্রথমে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলেন। আমাকে বললেন, নামো, দেখা করে যাও। আমি দোতলায় বঙ্গবন্ধুর ঘরের কাছে গেলাম। মনি ভাইয়ের মা বঙ্গবন্ধুকে বললেন, এই যে দেখেন মঞ্জুর বউ আইছে। আমি বঙ্গবন্ধুকে কদমবুসি করলাম। আর বঙ্গবন্ধু আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে হাত ধরে যখন ওঠালেন, আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ জেগেছিল। আমার মনে হয়েছিল, ওনার দোয়ার হাত আমার মাথায়! আমি ধন্য! আমার জীবনটা যেন ধন্য হয়ে গেল!
শেখ কামাল তার বিয়ের তিন-চার দিন আগে আমাকে ফোন করে বাড়িতে দাওয়াত দিলেন। ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের। আমি আর আমার বান্ধবী ইয়াসমিন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেলাম। আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন শেখ কামাল। অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা ছিলেন শেখ কামাল। আমাকে উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন, দেখেন ভাবি, নতুন স্টাইলের ফোন। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। তার ঘরে তখন নতুন ফ্যাশনের একটি টেলিফোন এসেছে। লাল রং, একটু উঁচু, সাপের মতো প্যাঁচানো। আমার সেদিনের একটি কথা এখনো ভীষণ কানে বাজে, এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। ‘প্রেমনগর’ নামে একটি হিন্দি সিনেমা ১৯৭৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল, সেখানে রাজেশ খান্নার একটা গান ‘এ লাল রং কব মুঝে ছোড়েগা’র প্রথম কলি টেলিফোনের লাল রঙের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে গেয়ে উঠলেন শেখ কামাল। কী ভয়াবহ ট্র্যাজেডি! সেই লাল রং শেখ কামালকে ছাড়েনি কখনো। বিয়ের মাত্র মাসখানেক পরে সেই লাল রঙে ভেসে গেলেন শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মতো ট্র্যাজিক ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে খুব কম আছে। এই শোক কখনো ভুলবার নয়।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা