মানবমস্তিষ্কে ইলেকট্রিক-চিপ কিভাবে কাজ করবে
এতদিন যা কেবল সায়েন্স ফিকশনে দেখা যেত, এখন তা বাস্তবে ঘটতে শুরু করেছে। ৫ থেকে ১০ বছর পর হয়তো বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই ব্রেইনে যন্ত্র বসাবেন। হতে পারে, শুধু মনের ইশারায় মানুষ চালাবে কম্পিউটার। কেউ একজন মনে মনে ভাববেন কম্পিউটারে এখন নতুন একটি ওয়ার্ড ফাইল খুলুক এবং সঙ্গে সঙ্গে তা মনিটরে চলে আসবে। হাত না নাড়িয়ে, হয়তো সেখানে দরকারি লেখাটি, কী-বোর্ড না চেপেই লিখে যাবেন কেউ কেউ।
এমনই একটি লক্ষ্য বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের। আর তা বাস্তবায়নের বড় একটি ধাপ পার করেছেন তিনি। ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক মানুষের ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট করেছে। তিনি তার নতুন প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন টেলিপ্যাথি।
মানুষের ব্রেইন এই প্রথম ইমপ্ল্যান্ট করেছে নিউরালিংক। এটি ইলন মাস্কের একটি স্টার্ট আপ। এর শুরু হয় ২০১৭ সালে। স্টার্ট আপও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তবে এই ধরনের কোম্পানিগুলো নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে। বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে তারা এ থেকে আয় করে। মস্তিস্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরির কাজ করছে নিউরালিংক। যার উদ্দেশ্য হলো, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্যারালাইজড ধরনের অসুস্থ মানুষ শুধু মনের ইশারায় বা চিন্তাভাবনা ব্যবহার করে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে। আর এই কাজটি করার জন্য মানুষের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড রোপনের কাজ করছে কেম্পানিটি।
ব্রেইনের ভেতরে একটা কিছু রেখে দেয়া তো মারাত্মক বিষয়। দশ বছর ধরে এই কাজটি করে আসছে ইলন মাস্কের কোম্পানি। মানুষের ব্রেইনে ইলেক্ট্রোড রোপন করে ব্রেইনের সিগনাল বুঝে, পক্ষাঘাত, পার্কিনস, মৃগীর মতো রেগের চিকিৎসায় প্রযুক্তি ব্যবহার করার চেষ্টায় আছে নিউরালিংক। এই ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম নয়। ২০০৪ সালে মানুষের ব্রেইন নিয়ে কাজ করে, এমন একটি যন্ত্র বা ডিভাইস বিশ্বের সামনে এসেছিল। এর নাম ছিল ইউটা অ্যারে। মানুষের এই সমস্যার সমাধান করতে অনেক কোম্পানিই কাজ করছে এবং তাদের মধ্যে ভালোই প্রতিযোগিতা চলছে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2024/02/1-59.jpg)
এটি কী বৈধ?
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এই যে মানুষের ব্রেইনে একটা কিছু রোপণ করে দেয়া, এটি কী বৈধ? এই প্রশ্ন যে কেউ করছেন না, তা নয়। বিভিন্ন প্রাণীর ওপর ধারাবাহিক ইমপ্ল্যান্ট ট্রায়াল আগেও হয়েছে। পরে মানুষের মাথায় ইলেক্ট্রোড রোপণ করে দেয়ার ঘটনা ঘটে গত বছরের মে মাসে। মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তবে বিভিন্ন প্রাণীর দেহে অস্ত্রোপচারের কারণে কোম্পানিটিকে বেশ সমালোচনা সইতে হয়েছে। বিশেষ করে, বানরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে অস্ত্রোপাচারগুলো যথেষ্ট যত্ন নিয়ে করা হয়নি বলে সমালোচনা করেছে ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর রেসপন্সিবল মেডিসিনের সদস্যরা।
তবে ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, নিউরালিংক ডিভাইসে ১ হাজার ইলেক্ট্রোড থাকে, যা অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে অনেক বেশি। এটি একটি নিউরনকে টার্গেট করে কাজ করে। অন্যান্য অনেক ডিভাইস একগুচ্ছ নিউরন থেকে সিগন্যাল নেয়ার চেষ্টা করে। ফলে ঠিকঠাক কাজ করলে নিউরালিংক অন্য ডিভাইসের তুলনায় সূক্ষ ও সঠিক সিগন্যাল দিতে পারবে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2024/02/2-51.jpg)
এখন প্রশ্ন হলো, এই ইমপ্ল্যান্ট কীভাবে কাজ করে? প্রথমে অপারেশন করে মাথার খুলির ভেতরে চিপ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স রেখে দেয়া হয়। এগুলো তার ছাড়াই মোবাইল ফোনের মতো কাজ করে। ব্রেইনের তথ্য নিউরালিংক অ্যাপে পাঠিয়ে দেয়। এই অ্যাপে মানুষটি কী করতে চায় তার অনুবাদ হয়। যেসব ইলেকট্রনিক্স মাথার খুলির ভেতরে রেখে দেয়া হয়, তা দূর থেকে ওয়্যারলেস বা তারবিহীন পদ্ধতিতে চার্জ করা যায়। পুরো ইমপ্ল্যান্ট প্রক্রিয়াটি করার জন্য এক ধরনের সার্জন রোবটও তৈরি করেছে ইলন মাস্কের কোম্পানিটি।
এই ডিভাইস দিয়ে আসলে কী করতে চান ইলন মাস্ক?
শুরুতে তিনি প্যারলাইজড লোকজনকে কর্মক্ষম করতে চান। ক্রমান্বয়ে তার ডিভাইস শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হারানো লোকদের সহায়তা করবে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে হয়তো তার প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষকে এক করে দেয়া যাবে। এটুকু করা গেলেই সায়েন্স ফিকশন আর ফিকশন থাকবে না। হয়ে ওঠবে বাস্তব।
যাই হোক, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে ইলন মাস্ক তার নতুন প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন টেলিপ্যাথি। এই বছর ১১টি অপারেশন করার টার্গেট রয়েছে কোম্পানিটির। সাধারণত এই ধরনের গবেষণা বছরজুড়ে চলে এবং ১০ থেকে ১১ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এরপর ফিজিবিলিটি বা সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা হবে। আরও কিছু ধাপ পেরিয়ে, যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে হয়তো ৫ থেকে ১০ বছর পর বাণিজ্যিকভাবে এই ডিভাইস মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে।