Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পতিতালয়ের মাটিতেই মায়ের মৃন্ময়ী রূপ

আশ্বিন মাসের শুরুতেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজোর আয়োজন শুরু। উমা আসছেন মর্ত্যে । প্রতিটি পাড়ায় দূর্গামন্ডপ সাজানোর ধুম। পূজোর উদ্যোক্তারা এখন খুবই ব্যস্ত। দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। দেবীকে মৃন্ময়ী রূপ দিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে কুমোরটুলি গুলোতে। বলা হয়, দেবী দুর্গার কাঠামো পূজো হয় রথযাত্রার দিন। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হয় মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ। মৃৎশিল্পীর নিপুণ হাতের জাদুতে মহিষাসুরমর্দিনী আস্তে আস্তে রূপ পাবেন। এই আনন্দের সময় অনেকেরই মনে উমাকে নিয়ে রয়েছে হাজারো প্রশ্ন। যুক্ত হয়ে আছে বিস্ময়ের রূপরেখা।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, মা দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে কয়েকটি বিশেষ উপকরণ লাগে। এসব উপাদান সংগ্রহ করা ছাড়া প্রতিমা গড়া অসম্ভব। পবিত্রতার প্রতিমূর্তি ‘মা’ দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে প্রথমে বিশেষ কিছু জায়গার মাটি সংগ্রহ করে নিতে হয়—রাজবাড়ির মাটি, চৌমাথার মাটি, গঙ্গার দুই তীরের মাটি ও ‘অশুদ্ধ’ পতিতালয়ের মাটি৷ সেই সঙ্গে জরুরি গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিষ ও পবিত্র গঙ্গার জল। হিন্দু শাস্ত্র মেনেই শিল্পীরা মূর্তি করার উপাদান সংগ্রহ করেন এবং মূর্তি গড়ে তোলেন। পূজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এসবের মধ্যে একটি উপাদান নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। মূর্তির জন্য নিষিদ্ধ পল্লীতে থাকা বারাঙ্গনার ঘরের দরজার বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সমাজে যারা নিষিদ্ধ, অপাংক্তেয়, ‘অশুচি’আর ‘অপবিত্র’ বলে গণ্য, তাদের বাড়ির বাইরের মাটি কেন সংগ্রহ করা হবে? হিন্দু পুরাণ মতে বলা হয়, পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকে অনেক বেশি। কারণ ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্ৰত্ব লাভের আশায় কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন তখন তার ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর দরবারের সব থেকে সুন্দরী নর্তকী মেনকাকে পাঠান। মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয়। দেবরাজ ইন্দ্র যে কাজ পারেন নি সামান্য নারী মেনকা সহজেই তা করতে পেরেছিলেন। এজন্য শক্তি স্বরূপা, জগৎজননী মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে এই পতিতালয়ের মাটি এক অপরিহার্য উপাদান। শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন। দুর্গা পুজোর সময় মা মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন ৷ এই নবম রূপটিই আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি। আর সে কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাছাড়া হিন্দু শাস্ত্রে পতিতালয়ের মাটি ব্যবহারের আরেকটি কারণ রয়েছে।

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনাচার করলে তার সমগ্র জীবনের পুণ্য পতিতার বাড়ির মাটিতে স্থান পায়। পরিবর্তে সেই পুরুষ পতিতার ঘর থেকে পাপ বহন করে নিয়ে আসে। বহু পুরুষের পুণ্যে তাই পতিতাদের বাড়ির মাটি পরিপূর্ণ থাকে বলে ধারণা করা হয়। এজন্য দুর্গা পুজোর মতো পবিত্র কাজে নিষিদ্ধ-পল্লীর মাটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্রচলিত আছে, মানুষের কামনা, বাসনা, লোভ, লালসা, কদর্যতাকে পতিতারা নিজের মধ্যে ধারণ করে নিজেকে অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ রাখে। সমাজের নৈতিকতাকে তারা একইভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই দেবী পুজোর মূর্তি তৈরিতে পতিতা-পল্লীর মাটি গ্রহণ করা আদতে তাদেরই খানিক সম্মান জানানো।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ