ইরানে হিজাব পরায় কড়াকড়ি: নারীর ওপর আবারও খড়্গ
পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা নারীর একান্তই নিজের। কিন্তু ইরানের ব্যবস্থা যেন তার ঠিক উল্টো। ইরানে হিজাব না পরায় ২২ বছর এক তরুণীকে আটক করা হয়। ৩ দিন পরেই মারা যায় ওই তরুণী। এরপর ইরানে শুরু হয় বিক্ষোভ। নারীরা হিজাব না পরে বের হচ্ছে বাসার বাইরে। আর তাদের শাস্তির আওতায় আনতে ইরান সরকার অবলম্বন করেছে এক কঠোর ও নিষ্ঠুর উপায়। শহরের সব জায়গায় বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যেন যেসব নারী হিজাব না পরেই বাইরে বের হচ্ছে, তাদের সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং শাস্তির আওতায় আনা যায়। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক?
একজন পুরুষ যেমন স্বাধীন দেশের নাগরিক, একজন নারীও তেমনি স্বাধীন দেশের নাগরিক। নারী কিভাবে পোশাক পরবে, কোথায় যাবে, কী বলবে, এসব তার ব্যক্তিস্বাধীনতা। এখানে পুরুষ কেন হস্তক্ষেপ করবে? নারীর সব কিছু যদি পুরুষই ঠিক করে দেবে তাহলে নারীর স্বাধীনতা আর রইলো কোথায়? পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীদের অগ্রগতির সম্ভাবনাই বা কোথায়? নারী তো সেই আদিম যুগের মতোই পুরুষের সেবাদাসী হয়েই রইলো।
প্রাচীন যুগে নারীরা ছিল শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। বিয়ের আগে বাবার ঘর আর বিয়ের পর স্বামীর ঘরকেই মনে করতো পৃথিবী। বিয়ের পর স্বামী আর সন্তানের সেবা করেই কাটিয়ে দিত তাদের জীবন। আমৃত্যু স্বামীর চরণদাসী হয়ে থাকতো। কিন্তু দিন বদলেছে। নারীরা এখন তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার। নিজের ইচ্ছা আর যোগ্যতায় ছুঁয়েছে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। পাড়ি দিয়েছে দূর মহাকাশে।
নারীর অগ্রগতির এই সময়ে সময়ে ইরানের এহেন পদক্ষেপ নিন্দনীয়। নারীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে অন্ধকার জগতে রাখা, নারীর পোশাক পরিধানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা, সর্বোপরি নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার পুরুষের নেই। কে হিজাব পরবে, কে পরবে না-এটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত বিষয়। নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার অধিকার না কোনো ব্যক্তির আছে, না তো অন্য কারো। নারীদের হিজাব পরিধান নিশ্চিতে শহরে সিসি ক্যামেরা লাগানো আরও নিন্দনীয়। এতে একজন নারী স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারবে না। কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না। সবসময় মাথায় এক চিন্তাই থাকবে, ‘কেউ হিজাব ছাড়া দেখে ফেললো না তো?’ ভেবে দেখুন, আপনি বাসার বাইরে গিয়েছেন, কেউ আপনাকে মনিটর করছে। বিষয়টি কি ভালো লাগবে? অবশ্যই না।
অনেক মোল্লা এখন তেড়ে আসবেন। তাদের যুক্তি, নারীদের ভালোর জন্যই এই আইন। নারীদের কাজ শুধু ঘর সামলানো। আর বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই পর্দা মেনে চলতে হবে, চুল ঢেকে রাখতে হবে। তাদের খাঁচায় বন্দি তো করা হচ্ছে না।’ নারীদের সর্বক্ষন মনিটর করা স্বাধীনতা? নারীকে একটি চিরায়ত নিয়মে আবদ্ধ করে রাখা খাঁচায় বন্দি করে রাখার মতোই নয় কি?
সমস্যাটা পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের চিত্তে, মননে, মতিস্কে। নারী এখন পুরুষের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে চলে। নারীরা এখন তাদের নায্য অধিকার বুঝতে শিখেছে। আর এতেই টনক নড়েছে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের। তাদের প্রচেষ্টাই এখন নারীকে অন্ধকারে রাখা, নারীদের ওপর নিজেদের নিয়ম জারি করা, পুরুষের তৈরি করা নিয়মে নারীদের চলতে বাধ্য করা।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এসব নিয়মের বিরুদ্ধে নারীদের জেগে ওঠা জরুরি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেঁধে দেওয়া এসব নিয়ম ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু ইরান নয়, সমগ্র বিশ্বের নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। নারী তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে আন্দোলন করবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকল ছিঁড়ে নিজেদের নিয়ে যাবে উন্নতির শিখরে।