সন্তানকে যেসব কথা বলবেন না মায়েরা
মায়ের কাছে তাদের সন্তান স্বর্গের ফুলের মতো। প্রত্যেক মা তার সন্তানকে ভালোবাসেন। সন্তানকে সঠিক পথে চালনা করা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। সন্তানকে আদর করার পাশাপাশি তাদের শাসনও করতে হয়। কিন্তু এই শাসনে প্রায়শই তারা সন্তানকে বকাবকি করে। আবার মাঝে মাঝে মারধরও করেন। অনেক সময় বাবা-মা রেগে গিয়ে শিশুদের উদ্দেশে বিভিন্ন কটূক্তি করেন। শিশুদের কঠিক কথা বলে শাসক করা ঠিক নয়। কারণ আপনার ওই সাধারণ শাসন, শিশুর কাছে হতে পারে অনেক কঠিন। এটি তার আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় আপনাকে ভুল বুঝে মন খারাপও করতে পারে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, এই ধরনের কটূক্তি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
আমরা বড়রা অনেক সময়ই এমন কিছু আচরণ শিশুদের সামনে করে ফেলি, যেগুলো করা উচিত নয়। আমরা শিশুদের শাসন করতে গিয়ে বকাবকি করি, অনেক সময় কটু কথা বলি। কিন্তু এই কটু কথাগুলোই শিশুর মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে শিশুদের বকাবকি করলেও কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
শিশুকে নিয়ে হাসাহাসি নয়
মায়েরা অনেক সময় শিশুদের কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা নিয়ে তাদের সামনেই ঠাট্টা বা তামাশা করেন। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অজান্তেই এই ঠাট্টা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই অভিভাবকদের উচিত ভুল করেও সন্তানদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো ঠাট্টা তামাশা না করা।
শিশুদের বোকা বলবেন না
কিছু মা আছেন, যারা শিশুদের সবসময় বোকা বলতে থাকেন। অবশ্য মায়ের জন্য বোকা শব্দটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ফলে শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে। তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া তাদের ভবিষ্যতে খুব খারাপ প্রভাব ফেলবে। বাবা-মা বা পরিবারের কারও উচিত নয় শিশুদের এই ধরনের বিশেষণ ব্যবহার করে কথা বলা। তাই শিশুদের সবসময় উৎসাহ দিতে হবে।
শিশুর আবেগকে অবহেলা করবেন না
অনেক সময় বাচ্চারা বলে যে, তাদের এই জিনিসটা ভালো লাগছে না বা কিছু খেতে দিলে খাবে না বলে বায়না ধরে। মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই তখন বকা দিয়ে কথা বলেন। শিশুর ওই সময়ের আবেগ মায়েরা বোঝেন না। শিশুদের মন খারাপ থাকলে বা কোনো ছোট বিষয়ে কষ্ট পেয়ে থাকলে কখনোই তা অবহেলা করা উচিত নয়। বরং তাকে বোঝাতে হবে এবং তার সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
শপথ করা এড়িয়ে চলুন
শিশুদের ভুলিয়ে রাখতে আমরা প্রায়ই মিথ্যে শপথ করে থাকি। কিন্তু পরে সেই শপথ রাখতে পারি না। যেমন, প্রায় তাদের এই কথা বলা হয় যে, তুমি যদি পরীক্ষায় প্রথম হও, তাহলে তোমাকে এই জিনিস দেবো বা ওখানে নিয়ে যাবো। কিন্তু আমরা পরবর্তী সময়ে সেই কথা বেমালুম ভুলে যান মা-বাবা। এতে শিশুরা ভুল জিনিস শেখে। তারাও শপথ রাখা প্রয়োজনীয় মনে করে না।
অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা
অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা সব বাবা মায়েরাই করে থাকেন। যেমন, ও এই কাজ করতে পারলে তুমি কেন পারবে না, বা ও পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, তুমি কেনো পারোনি? এভাবে অন্যদের সঙ্গে তুলনা বাচ্চাদের মানসিকতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই বাচ্চাকে কখনো অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়।
কর্তৃত্ব খাটানো
কোনো কোনো মা অনেক সময় সন্তানের ওপর অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠি। তার সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত বাবা-মা নিয়ে থাকেন। তার অভিমতের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। তাকে বাধ্য করা হয় বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে। তারা ভাবেন, শিশুরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আসলে এই ধারণাটি ভুল। কোনো বিষয়ে শিশুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বডি শেমিং
অনেক শিশু একটু স্বাস্থ্যবান থাকে, আবার অনেকেই ক্ষীণস্বাস্থের হয়ে থাকে। তাদের বডি নিয়ে কখনো কটু কথা বলা উচিত নয়। পরিবার থেকে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। পরিবার হলো নৈতিক শিক্ষার প্রথম ধাপ। নৈতিক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা, যা মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে তার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যেসব পরিবারে পিতামাতা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের সন্তান স্বাভাবিকভাবে শিশুকাল থেকেই সে শিক্ষা তাদের মানসপটে গ্রহণ করে।
মানবিক গুণাবলি শিশুকাল থেকেই পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয়। এ বয়সে শিশু যে শিক্ষাটি পেয়ে থাকে, সেটি তার সারা জীবনের পথ চলায় পাথেয় হয় এবং জীবনকে সহজ করে দেয়। তাই পরিবারের বড়দের আচরণ হতে হবে মার্জিত, সুন্দর ও শিক্ষণীয়। কোমলমতি শিশুদের কোমলতা দিয়ে বড় করতে হবে। তাহলেই এই শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হবে। সহিংসতা, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা অদের ছোঁবে না। আমরা ভবিষ্যতে পাবো একটি সুন্দর সুশীল সমাজ।