নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধকতা দূর হোক
নারীরা জীবনের প্রতিটি পযার্য়ে স্বাধীন ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলে তবেই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। নারীকে ক্ষমতায়িত করা একদিনে সম্ভব নয়। সমাজে গজিয়ে ওঠা ধ্যান-ধারণা সমূলে প্রতিহত না করা গেলে নারীর প্রকৃত উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে। যদিও বর্তমান সরকারের উদ্যোগে নারীরা অগের তুলনায় এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তবু সমাজে নারীর অবস্থান এখনো সৃষ্টি হয়নি। নারীর যোগ্য মূল্যায়ন করা হয় না কোথাও। নারীবিরোধী নেতিবাচক মানসিকতা দূর নাহলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া ভার।
পরিবারে নারীরা আজও অবহেলিত। কন্যা শিশু জন্মবার পর থেকে শুরু হয় তার ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ। পরিবারে নারীর প্রতি এরূপ বৈষম্য সৃষ্টি হলে ঘরের বাইরে নারীর প্রকৃত সম্মান আনয়ন করা কষ্টসাধ্য। ফলে নারীর প্রতি সম্মান সৃষ্টি করতে হবে পরিবার থেকে। পরিবারে ছেলে এবং মেয়ে সন্তানের মানসিক বিকাশের প্রতি সমান গুরুত্বারোপ করতে হবে। কন্যাশিশু পরের ঘরের আমানত ভেবে তার সঙ্গে অসংলগ্ন আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার প্রথমধাপই বলা চলে পরিবার। তাই আগে পরিবারের মধ্যে সমতা, স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা গড়ে তুলতে হবে।
নারীর স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার আছে৷ প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বতন্ত্র। পুরুষের ক্ষেত্রে স্বাধীন জীবনযাপনে বাধা প্রয়োগ না করলেও আমাদের পরিবার, সমাজ নারীকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেয় না। এমনকি নারী যে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে সেটাও শিক্ষা দেওয়া হয় না। ছোট থেকেই কারো না কারও কাঁধে ভর করে তাকে চলতে হয়। বর্তমান নারীরা সচেতন হচ্ছে তাদের অধিকার সম্পর্কে। ফলে নারীরা তাদের মত প্রকাশে যতটা প্রাগ্রসর হবে, জীবনযাপনে যতটা স্বাধীনভাবে, নিরাপদভাবে চলতে পারবে নারীর ক্ষমতায়ন তত মসৃণ হবে। তাই নারী শক্তিকে জাগ্রত করতে নারীর পায়ের শেকল পরানো বন্ধ করি আমরা।
পরিবারে, সমাজে নারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারী কোনো পণ্য নয়। নারী পূর্ণ একজন মানুষ। ফলে শুধু একটি শব্দে তাকে সংজ্ঞায়িত না করে তার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। আজও সমাজের আনাচে-কানাচে শোনা যায়, তুমি নারী, তাই এ কাজ তোমার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। এই ভ্রান্ত ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কেন পারবে না নারী বরং সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে। একজন পুরুষ যদি যেকোনো কাজ করতে সক্ষম হয় তবে নারী কেন নয়?
নারীর ক্ষমতায়নের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা শিক্ষা। নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে বর্তমানে। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিয়ে শতভাগ বন্ধ করা যায়নি। নারীকে ক্ষমতায়িত করতে হলে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। শতভাগ নারী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব। তাই জাতির ভবিষ্যৎ কণ্টকমুক্ত করতে নারী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা নিশ্চিত হলে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে।
নারী শিক্ষার পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়ন জোরদার করতে নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষিত বেকার সমাজের জন্য বোঝা স্বরূপ। ফলে নারীর শিক্ষার পাশাপাশি যাতে তারা কর্মজগতে প্রবেশে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা। নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নাহলে পরিবার, সমাজে নারীকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না আজও। গৃহে নারী যত কাজই করুক না কেন তা ধর্তব্যের মধ্যে ধরে না আমাদের সমাজ। ফলে নারী যেন তার কাজের মূল্যায়ন পায় এবং নিজের সম্মান, শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করতে পারে এ লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। আর অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে নারীরা অনেকটা সচেতন তবে সঠিক কর্ম পরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে কার্যকরী কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর সুস্থ জাতি গড়ে ওঠে৷ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে। নারী যে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মন থেকে স্বীকৃতি দিতে হবে৷ পুরুষ নারীর সহোযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে পারলে নারীরা দেশের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পাবে বেশি। নারীর শিক্ষা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নারীর কাজকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীকে ছোট করে দেখলে চলবে না।
রাজনৈতিক, সামজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, আইনগত সব প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূল করে তুলতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নারীকেই সচেতন হতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে।