নারীর প্রতি পাশবিকতার শেষ কোথায়
আমাদের সমাজে নারীদের কোথাও কোনোই নিরাপত্তা নেই। আজও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি! পরিবারে, রাস্তায়, গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এই অপরাধপ্রবণতা কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না। মানুষের মনুষ্যত্ব-বিবেকের এতটাই অবক্ষয় ঘটেছে যে, যার প্রতি অতি যত্নশীল, কমোল আচরণ করা উচিত সেই ব্যক্তিটির প্রতিও চলছে নির্যাতন। কী এক অরাজক পরিস্থিতি পার করছে জাতি!
ঘরের বাইরে নারীরা নিরাপদ নয়, সেটা নারীরা মেনেই পথ চলতে শুরু করছে। জীবন বাজি রেখেছে। কিন্তু যখন ঘরের মধ্যেই তার সঙ্গে ঘটে পাশবিক অত্যাচার তখন এই নারীরা কোথায় গিয়ে একটু শান্তি, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে? কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নে ভাশুরের নির্যাতনের শিকার হয় এক অন্তঃসত্ত্বা নারী (রাবিয়া বসরী-৩০)।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর শাশুড়ির সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জের ধরে ভাশুর তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। গত ৭ অক্টোবর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি অপরিপক্ব ৩ মৃত সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসাকেরা জানান, মৃত শিশুদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মানুষের কতটা পাশবিকতা প্রকাশিত হলে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে!
আধুনিকতার নামে বারবার জাতির গায়ে রঙ চড়ালেও এরূপ পাশবিকতায় প্রমাণ করে দিন দিন আমরা কতটা বর্বর রূপ ধারণ করছি। নারীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ যেন এখনকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নেই। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী তার প্রতিও অত্যাচারীর হাত থমকে যায়নি। যে কি না তার কোন অপরিচিত মানুষও নয়! যদি পরিবারের সদস্যদের প্রতি আবু তাহেরেরা এতটা খড়গহস্ত হতে পারে তবে বাইরের জগতে যেকোনো অপরাধ করতে কি এদের এতটুকুও বিবেকবোধ কাজ করবে?
নারীর প্রতি এরূপ নির্যাতন এটিই প্রথম নয়। যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের অবরুদ্ধ করে রাখছে। তাদের শোষণ করে চলেছে। রাবিয়া বাসরীর মতো আর কতো নারী নির্যাতনের শিকার হলে প্রশাসনের টনক নড়বে! এসব অত্যাচারীকে দমাতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। ঘৃণ্য এই ঘটনা ঘটানোর জন্য, নারীর প্রতি অত্যাচারী হয়ে ওঠার জন্য অভিযুক্তের কোঠার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে কারও এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস না হয়।
জাতির এমন দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিকে কঠোর আইনের মাধ্যমে দমন না করা গেলে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। অপরাধপ্রবণ মানসিকতাকে রুখতে এখনই পুলিশ, প্রশাসনকে তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে।