বসন্ত, নাকি ভয়!
চারিদিকে কুঁড়ি আর ফুল। আকাশে ঝলমলে রোদ, আর গায়ে মিষ্টি হাওয়া। বাড়ির ভেতর থেকে দেখতে কী যে চমৎকার লাগছে বাইরের জগতটা!
তাই মাকে জোর করে বারান্দায় নিয়ে গেলাম, গাছে গাছে গোলাপি ফুল ফুটেছে, দেখাতে। আশপাশে বিশাল বিশাল নারকেল গাছ, পেয়ারা গাছ, বাগান জুড়ে গাঁদাফুল ফুটেছে।নাম না জানা আরো কত গাছ, ডেকে যাচ্ছে কত কত পাখি! মার মন ভালো হয়ে গেল এ-সব দেখে।
হঠাৎ করেই এক দঙ্গল মানুষ এসে বারান্দার গ্রিল ভেঙে ঢুকে পড়ল। ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের চোখে চোখ পড়ল আমার।
বাচ্চাটা দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু তার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসছে! গায়ে কাদামাটির আস্তর৷ না খেয়ে, না নেয়ে যেন দুর্ভিক্ষ-পীড়িত, হাত-পা শুকিয়ে প্রায় মৃত, কংকাল হয়ে গেছে৷ তবু বেঁচে আছে তার দুটো চোখ ৷ আমি নির্বাক চেয়ে আছি আর সে-ও আমার দিকে।
আচম্বিতে আমার শরীরের দিকে নাক বাড়িয়ে বললো, ‘তোমার গা থেকে তাজা মাংসের গন্ধ আসছে।’ বলেই এক পৈশাচিক হাসি দিল৷ গা রিরি করে উঠল আমার।
আমি ভাবলেশহীন হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ কয় দিন কী খেয়ে ছিলে তুমি?’ সে বলে, ‘বনে-জঙ্গলে, পৃথিবীতে এখন আর কিছু নেই৷ মুরগীর পালক আর কিছু ময়লা-আবর্জনা, যে উচ্ছিষ্ট মানুষেরা ফেলে গেছে।’
বাড়ি তো নয়, একটা ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে তাকে কিছু খেতে দিলাম। সে খাচ্ছে ক্ষুধার্তর মতো। আর তার আশপাশের মানুষদের মধ্য থেকে একজন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে বলতে লাগল,
‘আবার মেঘ জড়ো হতে শুরু করেছে,
আবার মেঘ জমছে,
আবার…
জানালা বন্ধ করো এক্ষনি।’
আমি জানালা বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাতাসের প্রবল ধাক্কায় পেরে উঠছি না কিছুতেই!
হঠাৎ সব শান্ত হয়ে গেল, আশপাশে অন্ধকার। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানটার আশপাশে শেয়ালের ডাক ছাড়া কোনো মানুষের সাড়া-শব্দ নেই: আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি তাহলে!
মনে পড়ল, মার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম! মার সাথে ফুলবাগান দেখাটা কি তাহলে স্বপ্ন ছিল? নাকি এই পৃথিবীর নির্মম ধ্বংসস্তূপটাই আমার স্বপ্ন!