নারীর নিরাপত্তা ও পুলিশ রোবট!
প্রযুক্তির ধারায় দিনকে দিনে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের সমাজ। কাজগুলোকে অধিক সহজতর করছে। এবার পুলিশ রোবটের মাধ্যমে নারীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারীরা। তারাই সাইবার স্পেসে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় নারীদের সেবা দিতে গত বছরের ১৬ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয় পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন।
সাইবার অপরাধের শিকার নারীরা যেন সহজে ও নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে ও প্রতিকার চাইতে পারেন, সে জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় পিসিএসডব্লিউ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানি সংক্রান্ত যোগাযোগ করেছেন এই সেলে। পুলিশ সদরদপ্তরের এলআইসি শাখার অধীনে পরিচালিত নারীরা এখন হটলাইন নম্বরে, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এবং ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে সম্প্রতি পিসিএসডব্লিউর অধীনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হতে যাচ্ছে। সাইবার হয়রানির শিকার নারীদের দ্রুত সহায়তা দিতে পুলিশ সদরদপ্তর একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন (এআই) টুল চালু করতে যাচ্ছে। এই এআই নিয়ন্ত্রিত বট নারীদের কাছ থেকে দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন অভিযোগ গ্রহণ করবে এবং জরুরি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে একটি অ্যালার্ম বাজাবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে ওই বটে নির্দিষ্ট ম্যাসেজের জন্য কোড দেওয়া থাকবে। কোনো নারী যদি ওই নির্দিষ্ট ধরনের ম্যাসেজ পাঠান তাহলে বট অ্যালার্ম বাজাবে।
এক বছরে যারা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ৪৩ শতাংশ বা ৫ হাজার ৪৭৫ জন। এ সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে ১৮৮৪ জন নারীকে। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানি করা হয় ৯৯২ জনকে। অন্যান্য উপায়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫১৮ জন।ঢাকা বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভুক্তভোগী এই সেলে অভিযোগ করেছেন, যা মোট অভিযোগের ৬৪ শতাংশ। তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি বন্ধ বা কন্টেন্ট ডিলিট করতে আগ্রহী থাকেন। এক্ষেত্রে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা সম্ভব হলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
পুলিশের এমন একটি উদ্যোগ নিসন্দেহে প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের।গোপনীয়তার সাথে নারীদের নিরাপত্তা প্রদানের এর থেকে ভালো কোন উপায় নেই।নিজেদের প্রযুক্তি খাতটিকে পুলিশ বারে বারে উন্নত করছে তারেই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশিং রোবটকে ধরা যায়।