ঝর্ণার রানী জাদিপাই
বাংলাদেশের প্রশস্ততর ও আকর্ষণীয় ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি জাদিপাই ঝর্ণা। আকৃতিতে দেশের সবচেয়ে বড় না হলেও গঠন আর অবস্থানের ভিত্তিতে এই ঝর্ণা সবচেয়ে অনন্য আর অপরূপা। উঁচু পাহাড় আর চার দিকে সবুজের সমারোহ। নির্মল নিস্তব্ধতা। অজস্র পাহাড়ের বুকে বেঁচে থাকা শত বছরের নীরবতার মাঝে ছন্দময় এক রিনঝিন কলতান নিয়ে সবার আড়ালে লুকিয়ে আছে জাদিপাই।
বাংলাদেশের বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় জাদিপাই ঝর্ণা অবস্থিত। বান্দরবানের কিওক্রাডাং পাহাড় থেকে পাসিং পাড়া হয়ে জাদিপাই পাড়ার এ ঝর্ণাটির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। স্থানীয়রা জানান, কিওক্রাডাং, জংছিয়া ও জাদিপাই এ তিনটি পাহাড়ি ছড়া (ঝিড়ি) একসাথে মিলিত হয়ে জাদিপাই ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে কালো পাথর বেয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে আসছে। ঝর্ণাটি পরে মিলিত হয়েছে সাঙ্গু নদীর সাথে।
কেওকারাডাং পর্বত থেকে পূর্ব দিকের ঢাল বেয়ে ১০/১৫ মিনিটেই বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়া। যার উচ্চতা ৩০৬৫ ফুট। পাসিং পাড়া পার হয়ে খাড়া পথ নেমে গেছে জাদিপাই পাড়া। পথটা এতো বেশী খাড়া যে, কোন কোন অংশে পা ফেলা সত্যিই দুষ্কর। ৩০/৪০ মিনিট এই পথে হাঁটলেই জাদিপাই পাড়া। জাদিপাই পাড়া থেকে আরও প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটলেই কানে আসবে ঝর্ণার পানির মিষ্টি মধুর রিনিঝিনি আওয়াজ, অর্থাৎ আপনি পৌঁছে যাবেন জাদিপাই ঝর্ণাতে। তবে, জাদিপাই পাড়ার পর থেকে পথ আর ততটাও বিপদজনক নয় অনেকটা পথই একেবারে সমতল কিন্তু ঝর্ণার কাছের অংশটা খুবই বিপদজনক পিচ্ছিল আর খাড়া।
বাংলাদেশের প্রশস্ততর ও আকর্ষণীয় ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি জাদিপাই ঝর্ণা। আকৃতিতে দেশের সবচেয়ে বড় না হলেও গঠন আর অবস্থানের ভিত্তিতে এই ঝর্ণা সবচেয়ে অনন্য আর অপরূপা। উঁচু পাহাড় আর চার দিকে সবুজের সমারোহ। নির্মল নিস্তব্ধতা। অজস্র পাহাড়ের বুকে বেঁচে থাকা শত বছরের নীরবতার মাঝে ছন্দময় এক রিনঝিন কলতান নিয়ে সবার আড়ালে লুকিয়ে আছে জাদিপাই। পথের পরিশ্রম আর ক্লান্তির সবটুকু অবসাদ দূর করবে লুকিয়ে থাকা ঝর্নার জল। মাঝে পাহাড়ের বুক চিরে স্বচ্ছ পানির ধারা পাথর বেয়ে নিচে নেমে আসছে। জাদিপাই ঝর্ণার প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে এক মাদকতাময় পাগল করা সুন্দর রূপ। প্রায় ২৫০ফুট উপর থেকে অবিরাম ঝরে পড়া পানির তিনটি ধাপে সূর্যকিরণ পড়তেই তৈরি হয় বর্ণিল রংধনু।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি(ফোর হুইল ড্রাইভ), বাস, সি এন জি করে রুমা যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ি/জীপ রিসার্ভ করলে প্রায় ৩০০০/৪০০০ টাকার মত ভাড়া পড়বে যা মৌসুম ও পর্যটকদের সমাগম ভেদে ভিন্ন হয়ে থেকে।
আর সার্ভিস এর বাসে করেও রুমা যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। বাসের সিট তেমন ভালো মানের নয়। বান্দরবান শহর থেকে রুমা যেতে সময় লাগবে কমবেশি ২ ঘণ্টার মত। রুমা নেমে সার্ভিস এর চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমা বাজার, ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।
নিয়ম অনুযায়ী রুমা বাজার থেকে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে আপনাকে গাইড নিতে হবে, দিনপ্রতি গাইড সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। বাজারে গাইড সমিতি আছে তাদের কাছে গেলেই গাইড পাবেন। গাইডকে সাথে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য নিবন্ধন করতে হবে। বড় দল গেলে আগে থেকে একটি কাগজে সবার নাম, ঠিকানা, পেশা, ফোন নম্বর ও বাসায় যোগাযোগের নম্বর সহ একটি তালিকা আগে থেকে প্রস্তুত করে নিয়ে যেতে পারেন।
রুমা বাজার থেকে সার্ভিস এর কিংবা রিজার্ভ চান্দের গাড়ী করে যেতে হবে বগা লেক বা বগা লেক এর কাছাকাছি যতদূর গাড়ী যায়। শীতকালে চান্দের গাড়ী বগালেক পর্যন্তই যায়, বর্ষায় চান্দের গাড়ীর শেষ গন্তব্য থাকে কমলা বাজার পর্যন্ত। বাকি পথটুকু পায়ে হেঁটে যেতে হয়, পিচ্ছিল পাহাড়ি খাড়া পথে ঐ সময়ে গাড়ী চালিয়ে উঠা সম্ভব হয় না বলে। চান্দের গাড়ী রিসার্ভ করলে ভাড়া নিতে পারে ২২০০-২৫০০ টাকা আর সার্ভিসের গাড়ীতে ১৫০-২০০ টাকা জনপ্রতি। প্রায় ঘণ্টা দেড় গাড়ী যাত্রার পর কমলা বাজার এসে পোঁছাবেন। এর পর আপনাকে পায়ে হেঁটে (ট্রেক করে) বগালেক উঠতে হবে। বগা লেক থেকে হেঁটে কিওক্রাডাং, তারপরে পাসিং পাড়া, পাসিং পাড়া থেকে পায়ে হেঁটে জাদিপাই ঝর্ণা।
কোথায় থাকবেন
আপনি বগালেক এ রাত্রি যাপন করতে পারেন। গাইড ই আপনার জন্য কটেজ ঠিক করে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বিভিন্ন কটেজ আছে এখানে একতলা দু তলা। তবে সিয়াম দিদির কটেজের ভালো নাম ডাক আছে। আর যদি কেওক্রাডং রাত যাপন করতে চান তাহলে কেওক্রাডং চুড়ায় উঠার আগেই একটা রেস্টুরেন্ট পাবেন উনাদের কটেজ আছে বললে ব্যবস্থা করে দিবে। ভাড়ার হিসাব বগালেকের মতই।