বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েরা কি আদৌও ফিরবে স্কুলে?
আফরোজা আক্তার মনি৷ নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী । করোনার ভয়াল ছোবলে যার ঠিকানা এখন শশুরবাড়ি। স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই দেয়া হয় বাল্যবিবাহ। দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে পাড় করছেন সময়। লেখাপড়াও থমকে আছে। প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। চর্চা নেই পড়াশোনার।
তাসফিয়া তিয়া। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবা-মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে। করোনায় বাবার ব্যবসায় পড়ে ধস। শুরু হয় আর্থিক অনটন। বাবার পক্ষে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। ছয়জনের পরিবারে দুবেলা খাবার জোটা দায়। বাধ্য হয়ে তিয়াকে পড়াশোনা ছেড়ে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এতে সংসারে অন্তত একজনের ভার কমলো কিনা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে খুলছে স্কুল-কলেজ। কোটি শিক্ষার্থীর মুখে হাসি। আবার ফিরবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু মনি আর তিয়ার মত অনেকেই হয়ত ফিরবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বারে। তাঁদের ফেরার পথটা যে এখন বেশ কণ্টকাকীর্ণ। স্কুলের ঘণ্টা হয়ত কানে আসবে কিন্তু ক্লাসে বসা হবে কিনা সন্দেহ । সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাওয়া হবেনা। হবে না উল্লাসের সঙ্গে স্কুল শেষে বাড়ি ফেরা। স্বপ্নগুলো যেন ঢাকা পরে যাবে অচিরেই।
আর এভাবে যদি স্কুলে না ফিরে তারা তাহলে ধ্বংস হবে কত না মনি তিয়ারা। বঞ্চিত হবে শিক্ষার আলো থেকে। তাদের জীবন সীমাবদ্ধ হবে শশুরবাড়ির চৌকাঠে। জীবনের হিসাব কষতে গিয়ে একসময় থেমে যাবে তারা। আর তারা যদি থেমে যায় তবে থেমে যাবো আমরা।
করোনা মানুষের জীবননাশ করলেও বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের করেছে স্বপ্ননাশ। তাদের বন্ধুরা যখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে, নিবে পরীক্ষার প্রস্তুতি তখন মণি আর তিয়ারা হয়ত রান্নার জোগাড় করবে। কিন্তু এমনটা কখনো কাম্য হতে পারে না। ওদেরকে আবার স্কুলে ফেরাতে হবে, ফেরাতে হবে পরীক্ষার হলে।