Skip to content

২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গৌরবের সাথে শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আজ বৃহস্পতিবার শততম বর্ষ পূর্ণ করলো বাংলাদেশের প্রথম ও সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই এই ভূখণ্ডের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা যাত্রা শুরু করে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে অবদান রেখে চলছে।

 

১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ওই বছরের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘নাথান কমিশন’। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য এই কমিশন গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যাত্রা কিছুটা থমকে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-১৯২০’ পাস হয় এবং ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। অবশেষে ১৯২১ সালের ১ জুলাই তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ এবং ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী, ৬০ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। 

 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ সংখ্যা ৮৪। ইনস্টিটিউট হয়েছে ১৩টি। শিক্ষক এখন ১ হাজার ৯৯২ জন ও শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ১৮ জন। ৫৬টি গবেষণাকেন্দ্র হয়েছে। তবে তেমন কোন গবেষণা না থাকার যুক্তি তুলে ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা বেশি হয়। বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও,মানের দিক দিয়ে অবনমন ঘটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

 

১৯২১ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ রদের পর। ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। পূর্ববঙ্গে মুসলমান মধ্যশ্রেণি বা পেশাজীবী শ্রেণি গড়ে তুলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

 

বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠারও রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ দেশের সব গণ-আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা ছিল অসামান্য। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

 

কেবল যে স্বাধীনতার পূর্বেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আন্দোলনের আখড়া তা নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় সকল আন্দোলনেরই কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ এর শাহবাগ আন্দোলন, ২০১৮ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০২০ এর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনসহ প্রায় সব আন্দোলনেরই কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শাহবাগ চত্বর। বাঙালির অধিকার আদায়ে যুগ যুগ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

 

ব্রিটিশ এবং পরে পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলের মানুষ যে পিছিয়ে ছিল, সেই অসামঞ্জস্য দূর করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে জাতি বিনির্মাণে ভূমিকা রাখে পূর্ববঙ্গের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুধু জাতি গঠনই নয়, গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রামেও নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

মহামারি করোনার কারণে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সশরীরে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিকেল ৪টায় ভার্চুয়ালি একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভাষা সৈনিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হবে আগামী ১ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ অনুষ্ঠান হবে, যেখানে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ