Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভাবস্থায় রোজা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত

প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীকে রোজা রাখতে হবে, এটাই ইসলামের বিধান। তবে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে গেলে কিছুটা ভাবতে হবে অবশ্যই। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, হবু মায়েদের রোজা রাখা উচিত না। এ নিয়ে ধর্মীয় নির্দেশনাও আছে। ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, গর্ভাবস্থা কিংবা মাতৃদুগ্ধ পান করানো মেয়াদে হবু মা বা মার রোজা না রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে।

বিষয়টি একবার ভেবে দেখুন। এই চৈত্রের গরমে দিনে অন্তত চৌদ্দ থেকে তেরো ঘন্টার মতো পানাহার ছাড়া থাকতে হয়। অথচ গর্ভাবস্থায় অন্তত দ্বি-গুণ ক্যালরি দেহে প্রয়োজন। ফলে গর্ভবতীকে অনেক চিকিৎসক দিনে অন্তত ছয় বার খেতে বলেন। প্রচণ্ড গরমে রোজা রাখার ফলে ডিহাইড্রেশনে ভোগাটা খুবই স্বাভাবিক। আর এর প্রভাব পড়তে পারে হবু মার আসন্ন সন্তানের ওপর। সন্তান অনেক ক্ষেত্রেই অপুষ্টি বা কম ওজন নিয়ে জন্মায়। একই-ভাবে প্রায়ই গর্ভবতী মূত্রনালির ইনফেকশনে আক্রান্ত হন।

তবে ধর্মীয় আবেগের চিন্তায় অনেকেই ঝুঁকি জেনেও রোজা রাখার চেষ্টা করেন। রোজা যে রাখতে পারবেন না- এমন না। আপনি চাইলে রাখতে পারেন। তবে সেটা গর্ভাবস্থার পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে। সেটাই একবার দেখে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস:

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস হবু মার কোনো মতেই রোজা রাখা চলবে না। এই সময়টি পেটের শিশুর গড়নের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ, গর্ভের শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এই সময় গড়ে উঠতে শুরু করে। আর এই গড়নের জন্য প্রসূতিকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টি, খনিজ পদার্থের সরবরাহ করতে হবে। এই সময় যদি কোনো প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, তার প্রভাব জন্মকালীন সময়ে পড়ে।

মধ্যবর্তী তিন মাস:

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে খাওয়ায় অরুচি, বমি-বমি ভাবের কারণে শরীরের দেখভাল করা একটু কঠিন। তবে মধ্যবর্তী তিন মাসে চাইলে রোজা রাখা যায়। এই গরমে অবশ্য রোজা রাখার ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেটেড থাকার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ-ছাড়া, খাবারের রুটিনটাতেও বেশ নিয়ন্ত্রণ আনা চাই। তা না হলে আখেরে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

শেষ তিন মাস:

এই তিন মাসেও কোনো মতেই রোজা রাখা উচিত না। কারণ, এ-সময় গর্ভের শিশু দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই, সতর্কভাবে হবু মার খাওয়াদাওয়ায় মনোযোগ জরুরি।

র্ভাবস্থায় যারা রোজা রাখবেন না:

গর্ভকালীন অবস্থায় মূলত তিন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত নারীদের রোজা রাখাতে বারণ আছে। প্রথমত, যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে, তাদের রোজা না রাখা ভালো। এ-ছাড়া হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সিদের রোজা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এমনকি যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের এই সময়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাই রোজা না রাখাই শ্রেয়।

গর্ভাবস্থায় রোজাদারদের করণীয়:

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে কিছু বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন-

*আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।
*ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। যদি একটানা পানি খেতে খারাপ লাগে, তাহলে জুস বা ফলের রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না।
*দিনে পরিমিত বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
*গরমে রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না।
*খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত, প্রোটিন ও ফ্যাট-সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখুন। তেল বা ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। ইফতারিতে এবং
*সেহরির সময় চা বা কোক জাতীয় কিছু খাবেন না। এতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

অনন্যা/ জেএজে

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ