Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিউকোরিয়া কেন হয়?

বিবাহিতা হোক আর অবিবাহিতাই হোক, সাদা স্রাব অনেক মেয়েদেরই একটি প্রধান শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। খরপ অর্থাৎ সাদা, জরধ-চধংংরহম অর্থাৎ প্রবাহমান বা স্রাব। তাই খরপঁৎরধ কথাটির মানে হচ্ছে সাদা সাব। যোনিপথে সাদা তরল পদার্থ নির্গত হওয়াকেই ডাক্তারী ভাষায় লিউকোরিয়া (খবঁপড়ৎৎযড়বধ) বা সাদা স্রাব বলে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক মেয়েদেরই ডিম্বনালী, জরাযু ও যোনিপথ থেকে সামান্য কিছু সাদা স্রাব নিঃসৃত হতে পারে। অতিরিক্ত সাদাস্রাব মেয়েদের যৌনাঙ্গে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অনুভুতির সৃষ্টি করে যা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসকে ব্যাহত করে। লিউকোরিয়া হলে চুলকোনিও থাকতে পারে। কাপড় অনেক সময় বাদামি বর্ণের দাগের সৃষ্টি করে। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যভাবে চলাফেরায় ব্যঘাত ঘটায় এবং দৈনন্দিন জীবনে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমান সাদাস্রাব হতে পারে। তার সবগুলিই বড় রোগ নয়। যেগুলো অস্বাভাবিক ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সেগুলিকেই শুধু প্রচলিত অর্থে লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব বলা হয়।  এই নিঃসরণে কোনো রক্ত, দুর্গন্ধ বা যোনিপথে/যোনির মুখে কোনো চুলকানি থাকবে না। কিন্তু লিউকোরিয়া হলে ভয়ের কিছু নেই। এটি খুব স্বাভাবিক এবং কোনোপ্রকার রোগজনিত কারণ ছাড়াই হতে পারে। আবার বিশেষ কোনো রোগের কারণেও হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হলো চুলকানি, লালচেভাব, দুর্গন্ধ, অস্বস্তি বা ব্যথা।   
যেসব কারণে লিউকোরিয়া হয়ে থাকে  
– জন্মের পর পর মায়ের শরীর থেকে পাওয়া হরমোনের প্রভাবে লিউকোরিয়া হতে পারে।
– বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক শুরু হওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন কোনো সমস্যা ছাড়াই সাদা¯্রাব নিঃসৃত হতে পারে।
– সাধারণত ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গমনের সময় (ওভুলেশন) তলপেটে ব্যথাসহ লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
– জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
– গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে লিউকোরিয়া হতে পারে।
এছাড়া অপুষ্টি, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা প্রভৃতি কারণেও লিউকোরিয়া হতে পারে। 

লিউকোরিয়া কেন হয়?
লক্ষণ
যৌনসংক্রামক রোগ বা জীবাণু সংক্রমণের দ্বারা সাদাস্রাব হলে তার প্রাথমিক প্রধান লক্ষণ হচ্ছে, অতিরিক্ত পরিমাণে সাদাস্রাব হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া এবং যৌনাঙ্গে চুলকোনি বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়া। দীর্ঘদিন থাকলে তা থেকে পরবর্তীতে তলপেট ও যোনিতে ব্যথা হতে পারে। জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট সাদাস্রাব পূর্ণ নিরাময় যোগ্য। মুখে শুনে এবং যৌনাঙ্গ ও স্রাবের লক্ষণ অনুযায়ী (এবং সম্ভব হলে ল্যাবরেটরি টেস্ট করিয়ে) সহজেই সাদা স্রাবের সুচিকিৎসা করা সম্ভব।

প্রতিকার 
মনে রাখতে হবে, মানসিক দুশ্চিন্তা, ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা ও অপুষ্টি এ সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে। কাজেই এ ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে, নিজের শরীর স্বাস্থ্য সবসময় সুস্থ রাখতে হবে, সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করতে হবে, দুশ্চিন্তা ত্যাগ করতে হবে এবং সমস্যা দেখা দিলে তা জটিল হবার পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দেরি করা যাবে না মোটেও।
কিন্তু সাদা¯্রাবের সাথে যদি রক্ত, দুর্গন্ধ, চুলকানি, তলপেট বা যোনিপথে ব্যথা, জ্বর প্রভৃতি উপসর্গ থাকে তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়া লিউকোরিয়া প্রতিকারের জন্য আপনার ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। পরিষ্কার কাপড়চোপড় ও অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনার মনে হয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কারণে লিউকোরিয়া হচ্ছে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজন হলে পিল বন্ধ করে অন্য ব্যবস্থা নিন। পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সেবন করুন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।

ডা. সুবা সাইয়ার
এমবিবিএস

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ