শীত থেকে গ্রীষ্মে ত্বকের যত্ন নিবেন যেভাবে
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম আবহাওয়া থাকে। এই আবহাওয়ার মাঝে ত্বকের যত্নেও পরিবর্তন আসে। শীতের সময়ের ত্বকের যত্ন একরকম। গ্রীষ্মকালে ত্বকের জন্য আবার ভিন্ন। ঋতু পরিবর্তনের সময় ত্বকের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয়। বিশেষ করে শীতের শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে গ্রীষ্মের উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে ত্বককে অভ্যস্ত করানো একটি ধীর এবং যত্নশীল প্রক্রিয়া। এই সময়ে ত্বকে কিছু সাধারণ পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: শুষ্ক ত্বক তেলতেলে হয়ে যাওয়া, ব্রণ ওঠা, সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া বা রোদে পোড়া দাগ। তাই শীত থেকে গ্রীষ্মে পরিবর্তনের সময় ধাপে ধাপে ত্বকের যত্নের পদ্ধতি বদলানো প্রয়োজন।

ময়েশ্চারাইজার পরিবর্তন
শীতে ভারী ও তেলসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় যা গ্রীষ্মকালে ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম ও তেল উৎপন্ন হয় যা লোমকূপ বন্ধ করে দিতে পারে।
শীতের শেষে ধীরে ধীরে লাইটওয়েট ও ওয়াটার-বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুরু করুন। অ্যালোভেরা জেল বা হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করতে পারেন, যা গরমের জন্য ভালো। যদি ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে যায়, তাহলে নন-কমেডোজেনিক (যা লোমকূপ বন্ধ করে না) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ফেসওয়াশ পরিবর্তন
শীতের রুক্ষ আবহাওয়ার জন্য সাধারণত মৃদু ফেসওয়াশ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তেল ও ধুলাবালির কারণে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি।
গ্রীষ্মের আগমনে অয়েল-কন্ট্রোল ফেসওয়াশ ব্যবহার করা শুরু করুন। যদি ত্বক শুষ্ক হয়, তাহলে জেল-বেজড বা হালকা ফোমিং ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। দিনে ২-৩ বার মুখ ধুতে হবে, বিশেষ করে বাইরে থেকে আসার পর।
স্ক্রাবিংয়ের অভ্যাস বদলানো
শীতকালে কম স্ক্রাবিং করা হয় কারণ এটি ত্বক আরও শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু গ্রীষ্মের শুরুতে স্ক্রাবিং করা জরুরি। কারণ এটি শীতের মৃত ত্বক দূর করে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
সপ্তাহে ২-৩ বার হালকা এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব ব্যবহার করুন। চিনি ও মধুর প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত স্ক্রাবিং করবেন না। কারণ এটি ত্বককে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।

সানস্ক্রিন ব্যবহার
শীতের তুলনায় গ্রীষ্মে সূর্যের প্রভাব অনেক বেশি থাকে। তাই এই ঋতুতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে SPF ৩০-৫০যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। যদি ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটান তাহলে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর সানস্ক্রিন পুনরায় লাগান। শুধুমাত্র মুখ নয় হাত, গলা ও কানেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ভারী মেকআপ পরিহার
শীতকালে ভারী ময়েশ্চারাইজার ও মেকআপ ব্যবহার করা গেলেও গ্রীষ্মকালে এটি ত্বকের জন্য ভালো নয়।
ভারী ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে BB বা CC ক্রিম ব্যবহার করুন। মেকআপ করার আগে অয়েল-ফ্রি প্রাইমার ব্যবহার করুন যাতে ত্বক দীর্ঘ সময় ম্যাট থাকে। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ ব্যবহার করুন যাতে ঘামের কারণে গলে না যায়।
পানি পান ও ডায়েট পরিবর্তন
গ্রীষ্মে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে ঘাম ঝরে। তাই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে বেশি পানি পান করা প্রয়োজন।
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। শসা, তরমুজ, কমলা ও ডাবের পানি বেশি খান। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঠান্ডা থেকে গরমে অভ্যস্ত
শীতের পর হঠাৎ গরমে অভ্যস্ত হতে গেলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: র্যাশ, ব্রণ ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি।
প্রচুর পানি ও হাইড্রেটিং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। বাইরে বের হলে সানগ্লাস ও ক্যাপ ব্যবহার করুন। এতে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বক রক্ষা পায়। খুব বেশি সময় ধরে এসিতে থাকবেন না। কারণ এটি ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে।
রাতে ত্বকের যত্ন
শীতের শেষে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে রাতের স্কিন কেয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয়।
রাতে ভালো মানের নাইট ক্রিম বা হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করুন। মৃদু টোনার ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বকের PH ব্যালেন্স বজায় রাখবে। অ্যালোভেরা জেল বা ভিটামিন E সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে।
শীত থেকে গ্রীষ্মে পরিবর্তনের সময় ত্বকের যত্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হয়। ভারী ময়েশ্চারাইজারের পরিবর্তে হালকা জেল-বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল-কন্ট্রোল ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ব্যবহারে অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়া প্রচুর পানি পান করা, হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং নিয়মিত স্ক্রাব ও ক্লিনজিং করলে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকবে। সঠিক যত্ন নিলে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে আপনার ত্বক থাকবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।