প্রযুক্তি খাতে কতটা এগিয়ে নারীর
২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি, ডিজিটাল মিডিয়া, ফ্রিল্যান্সিং এবং স্টার্টআপ উদ্যোগের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করছে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ কেবল তাদের ক্ষমতায়নের জন্য বড় পদক্ষেপ নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, প্রযুক্তি খাতে নারীর অগ্রগতির পথে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
দিন যত গড়াচ্ছে এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ, অবদান বাড়ছে। গ্রাফিক্স, কল সেন্টারের কাজ পেরিয়ে প্রোগ্রামিং, ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংসে (আইওটি) নারীর আগ্রহ বাড়ছে। ২০২১ সালের ১ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘জেনারেশন ইকুইটি ফোরাম’-এ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘টেক স্টার্টআপ ও ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৪ দাঁড়িয়ে সে লক্ষ্যমাত্রার কতটা নিকটে পৌঁছাতে পেরেছি?
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস-বেসিসের সমীক্ষা অনুযায়ী—তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এখন নারীর অংশগ্রহণ ১৬ শতাংশের মতো, কয়েক বছর আগেও তা ছিল ১২-১৩ শতাংশের মধ্যে। বেসিসের বাইরে এ খাতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ শতাংশে পৌঁছেছে।
দেশে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে এবং এতে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ক পড়াশোনায় নারীদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নারীরা এখন পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে পড়াশোনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন। এবং পেশাগত জীবনে তারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশে প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে নারী কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। গত কয়েক বছর ধরে প্রোগ্রামিং, রোবটিক্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছেলেদেরর পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
দেশে প্রযুক্তি ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ কয়েক বছর আগেই শুরু হয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে নারী অবস্থানও বেশ ভালো। সেই ভালোর ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছেন নারীরা। সংখ্যায় যেমন এটা বাড়ছে, তেমনি একটা সংগঠনকে শক্ত ভিত্তি দিতেও কঠোরভাবে কাজ করছেন তারা।
যদিও নারীদের প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি স্পষ্ট, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনও অনেক জায়গায় নারীদের প্রযুক্তি বা স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে পরিবার বা সম্প্রদায় মেয়েদের প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষায় নিরুৎসাহিত করে, যার ফলে অনেক নারীর জন্যই প্রযুক্তি খাতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনলাইনে হয়রানি, সাইবার আক্রমণ এবং নিরাপত্তাহীনতার শিকার হওয়ার দরুন নারীরা বিমুখ হয়ে পড়ছেন। তাই এ খাতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে নারীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধাগুলো দূর করতে হবে। নারীদের প্রযুক্তি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলি আরও বিস্তৃত এবং গতিশীল হতে হবে, এবং তাদের কর্মক্ষেত্রে সঠিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।