Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ দেশে প্রতিবাদ করাই অন্যায়!

বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের উপর সবথেকে বড় একটি অভিযোগ তারা বড্ড বেশি ঘরমুখো। এক যুগ আগেও বাচ্চাদের খেলার জায়গা ছিলো মাঠ আর বর্তমান সময়ে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাব। বিজ্ঞজনেরা শিশুদের গায়ে দোষ চাপিয়ে দেয়, কেন তারা ঘরমুখো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিশুদের খেলার মাঠ কোথায়, শিশুরা খেলবে কোথায়? এমন প্রশ্নই করেছিলেন সৈয়দা রত্না তাও খোদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। যার ফল স্বরূপ নিজের সন্তানসহ জেলে আটক থাকতে হয় পুরো একদিন।

রাজধানীর পান্থপথের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানের ভেতরে ছোট্ট তেঁতুল তলা মাঠ। সাধারণত এলাকার শিশুরা ঐ মাঠটিতে খেলাধুলা করে, আবার নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও চলে সেখানে। কিন্তু সম্প্রতি মাঠটিতে কলাবাগান থানা ভবন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয় রত্না। রত্নার নেতৃত্বে স্থানীয় একদল ওই মাঠটি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যান। নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়দের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় প্রশাসনকে।

একপর্যায়ে ওই মাঠ ঘিরে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিলেও রত্না তার বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন। রবিবার পুলিশ ওই মাঠে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করলে রত্না তার ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ফেইসবুকে লাইভ করার এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়।

সৈয়দা রত্না বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য। তার ছেলে আইডিয়াল কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। দুজনকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। তাদের আটকের খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন।

আটকের পর দিনভর অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিবাদের মুখে ১৩ ঘণ্টা পর তারা ছাড়া পেয়ে যান। “আন্দোলন না করার এবং আন্দোলন করলে পুলিশ যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে, এই শর্তে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।”

সাময়িক মুক্তি তো মিললো, কিন্তু কতগুলো প্রশ্নের যে আবির্ভাব হলো তার উত্তর কোথায়। কোন আইনে সারাদিন অভিযোগ ছাড়া মা-ছেলেকে ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হলো? কোথায় ছিলো বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা? বিনা অভিযোগে একজন নারী ও তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে দিনভর থানায় আটক করে রাখা, যেনো প্রশাসনের দ্বারাই লঙ্ঘিত হলো মানবাধিকার।

এ ঘটনায় প্রতিবাদ করছে কেবল হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠন ও কয়েকজন মানুষ। অথচ এ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পরা উচিত ছিলো পুরো দেশব্যাপী, মাঠ রক্ষার আন্দোলনে নামা উচিত ছিলো সাধারণ জনগনের। কিন্তু তা আর হলো কই। যেন অন্ধের দেশে আয়না বিক্রি করতে এসেছেন রত্না। হাজার হাজার অভিযোগ জমে থাকার পরও আইনি ব্যবস্থা নেন না পুলিশ কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই বড় অন্যায় হিসেবে দেখলো প্রশাসন।

অনন্যা/জেএজে

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ