শান্তির বার্তাবাহক ইরানের নার্গিসের নোবেল জয়
আজও গোটা বিশ্বই নারীর প্রতি বৈরী আচরণ করে তবু নারীরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাড় করেন নার্গিস মোহাম্মদিদের মতো অনুসরণীয় ও শক্তিশালী মনোবলসম্পন্ন নারীদের থেকে। একাধিক রায়ে বর্তমানে ইরানের এভিন প্রিজনে মোট ১২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মোহাম্মদি। ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন অলাভজনক সংস্থা ডিফেন্ডারস অভ হিউম্যান রাইটস সেন্টার-এর উপ-প্রধান নার্গিস মোহাম্মদি। মোহাম্মদি ইরানের অন্যতম মানবাধিকারকর্মী। তিনি নারীর অধিকার এবং মৃত্যুদণ্ড বিলোপের ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই ও মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গত বছর বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায়ও ছিলেন নার্গিস মোহাম্মদি।
নার্গিস সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। ২০১৬ সালের মে মাসে এ আন্দোলনের জেরে তাকে ১৬ বছরের জেলও দেওয়া হয়।
ইরানে নারীদের বিরুদ্ধে চলা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তার লড়াইয়ের জন্য দ্য নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার নার্গিসকে প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের ১২২ বছরের ইতিহাসে ১৯তম নারী।
এ পুরস্কারের আর্থিকমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন বা প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এ পুরস্কার অসলোতে বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। নার্গিসের শান্তিতে পুরুস্কার পাওয়ার মধ্যে দিয়ে এটিই প্রমাণিত হয়, সত্যের জয় সুনিশ্চিত।
ইতিহাস সাক্ষী গত কয়েকবছর যাবৎ ইরানে নারীর ওপর উৎপীড়ন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানের তেহরানে গ্রেফতার হন ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি। পুলিশি হেফাজতে কয়েকদিন পর মাহসার মৃত্যু হয়। এবং পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে মাহসার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আগের শারীরিক অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন আমিনি। সেদিন থেকেই ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থান নেয় ইরানের পুলিশ। ডিসেম্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে ইরান সরকার। এরপর চলতি বছরেও ইরানে নারীদের বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে।
নারীরা তাদের স্বাধীন জীবনযাপনকে তুলে ধরতে পথে নেমেছে। সেখানেও পুলিশি বাধা এসেছে। চলতি মাসেই ইরান সরকার নারীদের হিজাববিহীন চলাচলকে শনাক্ত করতে জনসমাগমস্থলে ক্যামেরা বসিয়েছে। এবং শনাক্তকারী নারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে । এতে দেশটিতে নারীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। কেউ কেউ প্রতিবাদস্বরূপ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের হিজাববিহীন ছবি, ভিডিও পোস্ট করছেন। এর মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইরানি এই নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নার্গিস। ফলে তাকেও সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। শান্তিতে নোবেল পাওয়ায় তিনি বিশ্বের নজর কেড়েছেন। এখন আশা এই যে, মানবতার ফেরীওয়ালা, শান্তির বার্তাবাহক নিজে মুক্ত হবেন, পৃথিবীর আপামর নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াবেন।
নার্গিস মোহাম্মদি ইরানী নারীদের মুক্তির দূত হয়ে তাদের আশার আলো দেখাক পাশাপাশি বিশ্ববাসী তাঁর আলোর বার্তা প্রাণে ধারণ করুক। নারী নিপীড়ন রুখে দিতে এক হয়ে আওয়াজ তুলুক। ঘুচে যাক অন্যায়-অবিচার-দুঃশাসনের নিপীড়ন। মুক্ত হোক নারী, যুক্ত হোক পৃথিবীর সকল কল্যাণে।