নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক
বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রে লিঙ্গ সমতা জরুরি। সরকারি বিধিনিষেধ আরোপিত হলেও জনমনে আজও বিশ্বস্ততা সৃষ্টি হয়নি। সরকারের একার পক্ষে কখনও লিঙ্গ সমতা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র সর্বোচ্চ তাগিদ সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু দেশে জনগণের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি হবে তাদের নিজেদের মানবিকতা বোধের জায়গা থেকে। কিন্তু আজও নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। তবে রাষ্ট্রের তাগিদ যেভাবে নারীর অগ্রযাত্রার সহযাত্রী তা গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান সরকার প্রধান নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি জনগণের মননেও সমানভাবে নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা সৃষ্টি হওয়া জরুরি। গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে যাতে সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতা হিসাবে, আমাদের তাদের সাথে জড়িত থাকতে হবে এবং তাদের এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশ আলাদা এবং তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। তিনি যোগ করেন, তবে, সবাই যেহেতু ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণ করেছে সেহেতু তাদের লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত।
“আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না। নারী নেত্রী হিসেবে, সকল নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে এমন উদাহরণ তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। একটি লিঙ্গ-সমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান এবং শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে,’’ তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
দেশনেত্রী যেভাবে নারীর অগ্রযাত্রায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাগিদ দিচ্ছেন বাস্তবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কাছে লৈঙ্গিক সমতা বিধান সেভাবে হচ্ছে না। লিঙ্গ সমতা বিধান হলেই নারীর অগ্রযাত্রা সুনিশ্চিত হবে। নতুবা বর্তমানে যেভাবে নারীদের প্রতিনিয়ত পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তবে রাষ্ট্র যেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিশ্চিত হলে অদূর ভবিষ্যতে নারীদের দূর্দশা ঘুচবে।
এলক্ষে সরকার প্রধান জাতিসংঘে নারীর নেতৃত্বের বিষয়ও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকান্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।” তার এমন সুদূরপ্রসারী ও ইতিবাচক চিন্তা দেশের নারীদের জন্য সত্যি শুভ। বর্তমান সরকার যেভাবে নারীর অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এর আগে কেউ এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ভাবেনি তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে যাতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রতিবন্ধকতা রুখে দেওয়া যায়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বুকে পদাঘাত করে নারীদের অগ্রযাত্রা সুনিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নারীরাও স্থিতিশীলতা অর্জনে অব্যাহত প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তিনি বলেন, “আমাদের লিঙ্গ-সমতা ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারী উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ আমাদের লভ্যাংশ দিয়েছে। আজ, জিডিপিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীকে তাদের পরিবার এবং সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে।” সরকার প্রধান নারীর এই অগ্রযাত্রার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা এ দেশীয়ও নারীদের জন্য আর্শীবাদ। তবে পরিবারে যদি নারীর সম্মান ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় তবে এই অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। তাই নারীর অগ্রযাত্রা সুনিশ্চিত করতে শুধু রাষ্ট্র নয় বরং দেশের প্রত্যেকের পরস্পর সাহায্য ও সহোযোগিতার অতীব প্রয়োজন। নারীরা আরও এগিয়ে যাক সব বাধার বুকে পদাঘাত করে।