মাহে রমজান; নারীর খেয়াল রাখে কজন?
বছর ঘুরে আবার চলে এল রমজান মাস। সারা দুনিয়ার মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে বছরের পবিত্রতম এবং শ্রেষ্ঠতম মাস রমজান। বছরের বাকি দিনগুলোতে নারীদের যেমন ব্যস্ততা থাকে, রমজান মাস আসলে এ ব্যস্ততা যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে এ পবিত্র মাসটি যেন ঘরের নারী সদস্যের জন্যও সহজ হয়, সে-বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া দরকার পরিবারের সবার।
ভোররাতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা যখন ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক সময় মতো ঘুম থেকে উঠে সেহরির জন্য টেবিলে বসেন, ঘরের নারী সদস্যকে তার আরো ঘন্টাখানেক আগে উঠে তৈরি করতে হয় সবার খাবার। এই দিনগুলোতেও অনেক পরিবারে দেখা যায়, সবার খাওয়া শেষ হলে তবেই সেহরির জন্য বসেন ঘরের নারী সদস্যরা। খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই যখন দিব্যি বিছানায় শরীর এলিয়ে দেন, তখন ঘরের নারী সদস্য যান বাকি কাজগুলো সাড়তে।
তাদের কাজ ফুরোতে ফুরোতে রাতের অন্ধকারও ফুরিয়ে যায়। তারপর দিনভর চলে ইফতারের জোগান-প্রচেষ্টা। আবার পুরো দিন রোজা রেখে ঘরের শিশুদের দেখভাল করাও মুখের কথা নয়। এরপর শুরু হয় ইফতার তৈরির তোড়জোড়। ইফতারের পর যখন সবাই ক্লান্ত অবস্থায় বিশ্রামের জন্য ছুটেন ঠিক তখনও নারীদের ছুটতে হয় বাকি কাজ গোছানোর জন্য এবং রাতের খাবারের আয়োজন করার জন্য৷
এভাবেই আমাদের সমাজে রমজান মাস জুড়ে নারীদের ব্যস্ত সময় কাটে। কিছু পরিবার রয়েছে, যারা তাদের এই ব্যস্ত সময়গুলোতে হাতে হাত লাগিয়ে সাহায্য করেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের ঘরের কাজগুলোকে কাজ মনে করতেই নারাজ আমাদের সমাজ। তাই রমজান মাস জুড়ে নারীর ওপর একগাদা কাজ চাপিয়ে দিয়েও কোনো সহায়তার চিন্তাও করেন না অধিকাংশ পুরুষ।
আবার অনেক কর্মজীবী নারীও রয়েছে, যাদের কর্মস্থলের কাজ সামলে এসে ঘরের কাজ সামলাতে হয়। রমজানে শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই নারীকে সুস্থ থাকতে হয়। কর্মজীবী নারী হোক কিংবা গৃহিণী, অফিস ও গৃহাস্থলির কাজ করে রমজানে সময় অনুযায়ী চলা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে রমজান অনেকটা সহজ হতে পারে একজন নারীর জন্য। যেমন-
ইফতারে প্রতিদিন একাধিক মুখরোচক খাবার আয়োজন নারীদের বেশি চাপ বয়ে আনতে পারে। তাই রোজ মুখরোচক খাবার তৈরি না করে কেবল পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় সব উপাদান রয়েছে এমন খাবার তৈরি করলে নারীর কাজ আরো সহজ হতে পারে। সেই সাথে ঘরের পুরুষ সদস্যরাও ইফতার তৈরির কাজে সাহায্য করতে পারে। আগেই সব রেডি করে রাখতে পারে। এতে করে কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
প্রথমত পেঁয়াজ, রসুন কেটে, প্রয়োজনীয় মশলা করে, সেই সঙ্গে মাছ, মাংস কেটে ধুয়ে রাখতে পারে। শরবত আগে থেকে তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারে।
একটি জিনিষ মাথায় রাখতে হবে, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে যেকোনো কাজ সহজ হতে পারে। তাই সকাল থেকে নোট করে নিতে পারে, কী কী করতে হবে আর সেই অনুযায়ী কাজ করুন। যে কাজগুলো বেশি জরুরি সেগুলো আগে, যেগুলো কম জরুরি সেগুলো সময় পেলে পরে করা যেতে পারে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। কারণ, একটানা কাজ করে শরীর ক্লান্ত হলে পরে আর কিছুই করতে ভালো লাগবে না। এ-ছাড়া, নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে এ মাসে। তাই এ মাস জুড়ে নারীর নিজেকে যেমন সুস্থ থেকে সব কাজ সহজভাবে করার চেষ্টা করতে হবে, ঠিক তেমনি পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও এ বিষয়ে নারীদের সহযোগিতা করতে হবে।