Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণ-ইভটিজিংয়ের জন্য পোশাককে নারীরাও দোষ দেয় কেন

আমাদের সমাজে কয়েকটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘ধর্ষণের জন্য দায়ী নারীর পোশাক’, ‘একহাতে তালি বাজে না’ ও ‘নিশ্চয়ই মেয়েটার চরিত্রে সমস্যা ছিল’। এছাড়া, ‘ছোট ছোট কাপড় পরে ঘুরলে ছেলেদের চোখ তো পড়বেই’। ‘মেয়েরাই সব নষ্টের মূল’; এই কথাগুলো একজন ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি আরেক নারীর ছুড়ে দেওয়া মন্তব্য। পুরুষের কিছুটা দোষ থাকলেও আসল দোষ তো নারীর। ঠিকঠাক পর্দা করলেই তো আর পুরুষের চোখ পড়ে না। এই ধরনের কথাবার্তা সমাজে প্রচলিত। যাদের যুক্তি নারীর পোশাকই ধর্ষণের মূল কারণ, তাদের জন্য কয়েকটা উদাহরণ।

২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার উত্তর অনন্তপুরের মোল্লাটারী গ্রামে সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। একই দিনে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীও ধর্ষণের শিকার হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৫ মে খুলনায় কলেজছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। সর্বশেষ চলতি বছরের (২০২৩) ৬ জানুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুরে তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল তার সৎ বাবার বিরুদ্ধে।

এখানে কয়েকটা ঘটনা উদাহরণস্বরূপ দেওয়া। যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো লিখতে গেলে দিন-রাত এক হয়ে যাবে। তাও লেখা শেষ হবে না। এখন অবধি এমন কোনো ধর্ষণের ঘটনা নেই, যেখানে শুধু পোশাকের জন্য নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের জন্য কি সত্যিই নারীর পোশাক, আচার-আচরণ দায়ী? তাই যদি হতো, তাহলে ৯ মাস বয়সী শিশু কেন ধর্ষণের শিকার হবে? একটা ৯ মাস বয়সী শিশুর শরীরে কি এমন থাকে যে, পুরুষরা তাতে আকৃষ্ট হয়? কারও কাছে কোনো যুক্তি আছে, কেন ২ বছরের শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়?

ধর্ষণের জন্য নারী দায়ী নয়। এককভাবে দায়ী ধর্ষণকারীর বিকৃত মানসিকতা। একজন ধর্ষণকারী কখনোই সুস্থ মস্তিষ্কের হতে পারে না। নারীর পোশাক, বয়স, আচরণ কোনো কিছুই দেখে না ধর্ষক। তাদের বিকৃত কাম চরিতার্থ করার জন্য নারীদের শিকার বানায় তারা।

কিন্তু অবাক করার বিষয় এই যে, একজন ধর্ষণের শিকার নারীর বিরুদ্ধে বেশিরভাগ নারী কথা বলে। ওই ভুক্তভোগীর জায়গায় তারা নিজেকে ভাবতে পারে না। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর দোষের শেষ নেই। আবার কেউ ধর্ষণের শিকার হলে তার দায়ও নারীর! নারীরাই ধর্ষণের জন্য দায়ী করে নারীর পোশাককে।

ধর্ষণের কারণ হিসেবে যারা পোশাককে দায়ী করেন, তারা আদতে আত্মমর্যাদাহীন। ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করা মানে ধর্ষককে প্রশ্রয় দেওয়া। এই প্রশ্রয়কারীরাও অপরাধী। এককথায়, একহাতে তালি বাজে না বা এ ধরনের কথা যারা বলে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি। ধর্ষকের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা জরুরি। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলেই ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ