Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মস্থল হয়ে উঠুক নারীবান্ধব

নারী লক্ষ্মী, নারী মনীষা, নারী বেহুলা আবার নারী দশভুজা। প্রাচীনকালে নারীরা অন্তপুরের বাসিন্দা থাকলেও বর্তমানে তারা সমানতালে ঘরে-বাইরে কাজ করে যাচ্ছে। বেগম রোকেয়ার একটি উক্তি, ‘আমরা পশু নই; বলো ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বলো কন্যে। আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সবাই সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।’ নারী তাদের বন্দিদশা থেকে নিজেদের মুক্তির পথে এগিয়ে আসছে। নারীরা এখন শুধু নারীরূপেই নয় বরং মানুষ রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। স্কুলশিক্ষিকা বা সরকারি চাকরি, ব্যাংক বা করপোরেট অফিস, পাইলট কিংবা সাংবাদিক-সব ক্ষেত্রেই নারীদের পদচারণা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন৷ বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী৷ আর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী৷ দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷

বাংলাদেশে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৪টি৷ এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩, অর্থাৎ শতকরা ৭.৬ ভাগ৷ উপসচিব পদ থেকে সচিব পদ পর্যন্ত নারীদের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ বা তারও কম৷ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিচার বিভাগে বিচারক পদের ১০ শতাংশ হলো নারী৷ তবে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি পদে এখনো নারীকে দেখা যায়নি৷ বাংলাদেশে নারীরা রাজনীতিতেও অবস্থান করে নিচ্ছেন৷ তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন বিমান চালনার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজেরও৷

কিন্তু কর্মস্থলে নারীদের কাজের পরিবেশ কেমন? আদৌ কি নারীরা কাজের জায়গায় নিরাপদ? বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, ‘পুরুষ ও নারী হচ্ছে গাড়ীর দুই চাকা। এক চাকা অচল হলে গাড়ী চলতে পারে না।’ আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও একই রকম। নারী পুরুষের সম্মিলিত অগ্রগতিতে এগিয়ে যাবে আমাদের সমাজ। কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার। রাস্তাঘাটে যৌন নিপীড়নের শিকার তো হয়ই, কর্মক্ষেত্রেও নারীরা শিকার হচ্ছে যৌন-হয়রানির। শারীরিক, মানসিক, মৌখিক-বিভিন্নভাবে একজন নারী যৌন-নিপীড়নের শিকার হতে পারেন।

কর্মক্ষেত্রে যৌন-হয়রানি নারীদের কাছে নতুন কিছু নয়। নিজের কর্মস্থলের থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা কি আর হওয়া সম্ভব? বসের ফণা তুলে ফোঁসফোঁস করা, শিক্ষকের ভক্ষকের মতো আচরণ যে নারী একবার দেখেছেন, তিনিই জানেন কত কুৎসিত তাদের দৃষ্টি, কত জঘন্য তাদের ভাষা, কতটা হিংস্র তাদের স্পর্শ। চক্ষুলজ্জা ও চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকে এ বিষয় গোপন রাখেন । তার মানে এই নয় কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি হচ্ছে না। অশ্লীল কৌতুক, ফোনে বা ইমেইলে কু ইঙ্গিত, অপ্রীতিকর স্পর্শ, কাজের ছুতোয় শারীরিকভাবে হেনস্তা করা, আরও অনেক কিছুই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।

কর্মজীবী নারী ও কেয়ার বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে আরেক তথ্য, বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হন। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি। শুধু যারা নিজে এগিয়ে এসে কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, তাদের নিয়ে করা হয়েছে এই সমীক্ষা। অনেক নারীই যৌন নিপীড়নের বিষয় গোপন রাখেন। শুধু পরিবারের ভয়ে বা চাকরি হারানোর ভয়ে। আর দিন দিন যেন এই নিপীড়নের মাত্রা বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনও যেন নীরব দর্শক। নারীর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার দায়ভার যেন নারীরই। বাসা হোক কিংবা অফিস সবখানেই দায় শুধু নারীর।

কবে বন্ধ হবে নারীর প্রতি এই নির্যাতন? নারী কি নিরাপদে রাস্তায় চলতে পারবে? পারবে অফিসে নির্ভয়ে কাজ করতে? নারীর প্রতি অন্যায়ে প্রশাসন কি পালন করবে তাদের দায়িত্ব? সব প্রশ্ন ছাপিয়ে নারী পুরুষ কি বন্ধুর মত একসাথে সমাজের উন্নয়নে কাজ করবে? এর উত্তর একটাই। নারীকে দেখতে হবে মানুষরূপে। যদি নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা যায় তাহলেই একমাত্র দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ