Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

বাংলা গানের সোনালি যুগের কথা ভাবলে যে কজন গুণী শিল্পীর নাম মাথায় আসবে, তার মধ্যে প্রথম দিকেই থাকবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় নেপথ্য সংগীতশিল্পী, বাংলা সংগীত বিশেষজ্ঞ। কয়েকটি প্রজন্মের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় তিনি। কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তার গানের মধ্যে দিয়ে জয় করেছেন বাঙালির হৃদয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাস্ত্রীয় সংগীত, সিনেমার প্লেব্যাক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি ও পুরাতনী গানেও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। শুধু বাংলা গানেই নয় বলিউডেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের ঢাকুরিয়া তে জন্মগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা দেবীর বাবার নাম নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যিনি ভারতীয় রেলে কর্মরত একজন অফিসার ছিলেন। এবং তাঁর মায়ের নাম হেমপ্রভা দেবী। সন্ধ্যাদেবীর পরিবারে তিন ভাই এবং দুই বোন ছিল। সন্ধ্যা দেবী ১৯৬৬ সালে কবি শ্যামল গুপ্ত এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যিনি নিজেই সন্ধ্যাদেবীর অনেক গানের লিরিক্স লিখেছেন। তাদের মেয়ের নাম হলো সৌমি সেনগুপ্ত।

তাঁর প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবা। তাঁর বয়স যখন ১৪ বছর ছিল সেই সময়ে গীতশ্রী নামে একটি গানের পরীক্ষা হতো। সেই পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় তাঁর নামের সামনে গীতশ্রী পদবী যুক্ত হয়ে তাঁর নাম হয় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এরপরই বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য গান শুরু করেছিলেন।

প্রথমে ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয় ও পরে বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ে তাঁর পুঁথিগত শিক্ষার সূচনা হয়। তাঁর প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষার তালিম শুরু হয় পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, প্রফেসর এ টি কান্নান এবং চিন্ময় লাহিড়ী মহাশয়ের হাত ধরে। ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিক শেখেন তাঁর গুরু উস্তাদ গুলাম আলী খান ও উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁয়ের মৃত্যুর পরে তার ছেলে মুনাব্বর আলি খাঁয়েরের কাছে।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর সন্ধ্যাদেবীর সঙ্গীত প্লেব্যাক এর জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৪৮ সালের ‘অঞ্জন গড়’ চলচ্চিত্রের ‘অব নেহি ধারাত ধীর ধীর’ গানটির মাধ্যমে। বহুমুখী বাংলা গানের পাশাপাশি ১৭ টির ও বেশি হিন্দি চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন। একসময় তিনি মুম্বাইতে থেকেই বলিউডে গান গেয়েছেন। যদিও পরে কিছু বিশেষ কারণের জন্য তাঁকে আবার কলকাতায় ফিরে আসতে হয়।

সন্ধ্যাদেবীর কণ্ঠে গাওয়া বাংলা গান গুলির মধ্যে কয়েকটি হলো মধুমালতি ডাকে আয়, ললিতা গো বলে দি, এই সাঁঝ ঝরা লগনে, এবারে বুঝেছি আমি ইত্যাদি যা আজও শ্রোতাদের মনে সতেজ রয়েছে। আধুনিক গানে মাইল ফলক ছোঁয়া কিছু গান যা ছিল তাঁর গাওয়া এগুলো হলো- ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’ বা ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’। তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় হিন্দি গান গুলি হলো আয়ি মেরে জিভান কি সাঁঝ সুহানি (১৯৪৮), বোল পাপিহে বোল কউন হ্যায় তেরা চিতচোর (১৯৫১), জঙ্গল মঙ্গল (১৯৫৩), মেইনে যো লি আংড়াই তেরি মেহফিল (১৯৫৬), এবং তোসে ন্যায়না লাগে রে (১৯৬৬) ইত্যাদি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রেখেছেন এই কিংবদন্তি। ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সাথে যোগ দেন গণ-আন্দোলনে এবং যুদ্ধ চলাকালে যারা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহও করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানও রেকর্ড করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দী হওয়ার সময় ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। স্বাধীনতার পর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পল্টন ময়দানে আয়োজিত উন্মুক্ত কনসার্ট অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি শিল্পী।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ‘জয় জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ সিনেমায় গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পদ্মশ্রী পুরষ্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

নিজের কণ্ঠ দিয়ে সকলের মনে জায়গা করে নেওয়া এই কিংবদন্তি গায়িকা ২০২২ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি হার্ট অ্যাটাক জনিত রোগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর জন্মদিনে পাক্ষিক অনন্যার পক্ষ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ