Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানির শহর গুজো হাচিম্যান

পানির শহরের কথা কেউ কখনো শুনেছেন? পানির রাস্তার শহর হতে পারে অথবা পানিতে ভাসমান শহর হতে পারে। কিন্তু পানির শহর আবার কেমন জিনিস! অবাক হওয়ার কিছু নেই। জাপানের গুজো হাচিম্যানে গেলেই রহস্যের মীমাংসা হবে। গুজো হাচিম্যান জাপানের পানির নগরী বলেই পরিচিত। কিন্তু এ-কথা শুনে আবার ভাববেন না, পুরো শহরটাই পানি দিয়ে তৈরি। ব্যাপারটা আদৌ এমন না। গুজো হাচিম্যান মূলত এই শহরের প্রতিটি অংশেই পানির ব্যবহারকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। শহর জুড়েই পাবেন টলটলে স্বচ্ছ পানি। আর সেই পানিতে দেখা মিলবে অসংখ্য মাছ। কখনো ঘুরতে ইচ্ছে হলে, এখানে আসবেন উবোনের সময়। সেটা কি? সে-কথাই জানাব আজ।

 

হাচিম্যানে পৌঁছানোর সময় প্রায়ই চোখে পড়বে অনেক ফটোগ্রাফার দূরে তাকিয়ে আছেন। সামনে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, আর পাহাড়ের নিচের সবুজের মাঝে কী এমন আছে যে ফটোগ্রাফার অপেক্ষায় থাকেন এক বিরল দৃশ্যকে স্থিরচিত্রে আটকে দেওয়ার জন্যই। হতেও পারে হাচিম্যান প্রাসাদ মেঘের ঢেলা ভেদ করে উঁকি দেবে। এ কারণেই হাচিম্যান প্রাসাদকে বলা হয় আকাশের প্রাসাদ।

 

হাচিম্যানে পৌঁছেই সবার প্রথমে আপনি ঘুরতে চাইবেন হাচিম্যান প্রাসাদ। সকাল সকাল মেঘের কারণে এই প্রাসাদ দেখাই যায় না। কিন্তু বেলা পড়তেই পাহাড়ের ওপর অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদটি চোখে পড়বে। যেন পাহাড় থেকে গুজো হাচিম্যানের অভিভাবকত্বের দর্প নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাটি। চারপাশে ঘিরে আছে ম্যাপলগাছ।

 

১৫৫৯ সালে এক সামন্তপ্রভু এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তখন সোগানের কাছেই এই প্রাসাদের মালিক জবাবদিহিতা করতেন। উনিশ শতকের শেষভাগে সোগানের সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এই প্রাসাদকে ভেঙে ফেলে বিদ্রোহীরা। তবে ১৯৩৩ সালেই আবার প্রাসাদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। তার পরও এর সৌন্দর্যের মধ্যে ভাটা পড়েনি।

 

প্রাসাদ না হয় নতুন, কিন্তু প্রাসাদ থেকে নামলেই বহু বছরের পুরোনো পথ। নদীর মাঝে একটা ব্রিজ ঠিকই মনোযোগ কাড়বে। ব্রিজে দাঁড়িয়ে যত দূর দেখা যায়, শহরের স্থাপনা। ব্রিজে দাঁড়ালে দেখা যাবে, অনেকেই মাছ ধরছেন, কেউ আনন্দে সাঁতার কাটছেন।

 

এই জায়গাকেই বলা হয় পানির শহর। মূলত পুরো শহরের অসংখ্য স্বচ্ছ পানির নালা, ফোয়ারা আর খালের জন্যই এর এই নাম। গ্রীষ্মে ঘুরতে গেলে সাঁতারের জোগাড়যন্ত্র করতে ভুলবেন না।

 

এখানকার পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, শহরের প্রতিটি নালায় মাছ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা একে কই মাছ বলে আখ্যা দেন। আরে নাহ্, একে মোটেও আমাদের দেশি কই বলে ভাবা যাবে না। লাল, কমলা, সাদা আরো নানা বর্ণের কই মাছের কারণে এখানকার পানি যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

 

প্রতিবছর অসংখ্য দর্শনার্থী এই কই মাছ দেখতেই এখানে আসেন। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নালার পাশেই ছোট বক্সে মাছদের খাবার দেওয়া থাকে। তাই কাছ থেকে এই মাছদের দেখতে চাইলে কিছুটা খাবার ছুড়ে দিন। গপাগপ করে কই মাছের ঝাঁক সেই খাবার খেতে চলে আসবে।

 

গরমে কিছুটা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে দ্রুত সুগি শাইন মন্দিরের পাশে মাচা আইসক্রিমের দোকানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।

 

গুজো হাচিম্যানে আরো আছে একটি স্থানীয় জাদুঘর। সেখানে গেলে উবন উৎসবের সংস্কৃতি আর উৎসবগুলো জেনে আনতে পারবেন। একমাত্র এই অঞ্চলেই জাপানের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিচারণের উৎসব উবোন কিছুটা ভিন্নভাবে পালন করা হয়। সেই আমেজ পেতে হলে অবশ্য আরেকটু দেরিতেই যেতে হবে। উৎসবের সময়টুকুও হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ