Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর প্রতি ভালো ‘ভাষা’ প্রয়োগ করুন!

মানুষের মনোভাব প্রকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম ভাষা। আর যখন নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশের জন্য এই ভাষার ব্যবহার করা হয় ঠিক তখনই ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায় বৈষম্য, অবহেলা, শোষণ।  আমাদের সমাজে নারীর প্রতি প্রয়োগ করার জন্য বেশ কিছু অবমাননাকর শব্দ প্রচলিত রয়েছে। নারীকে তথাকথিত সম্মান প্রদর্শন করা হলেও নারীর প্রতি ভালো ভাষা প্রয়োগ করার অভ্যাস আমাদের পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি৷ 

 

আমাদের সমাজে নারীর প্রতি প্রয়োগকৃত ভাষাগুলোই প্রমাণ দেয় সমাজ নারীদের কোন চোখে দেখে। বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও বয়সের কয়েকজন নারীদের জিজ্ঞেস করা হলো, চলার পথে সবচেয়ে কোন জিনিসটি তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়? বেশিরভাগ নারীদের উত্তর ছিলো, প্রতিনিয়ত চলার পথে শোনা কিছু অবমাননাকর শব্দ।  

 

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাজনীন জেরিন। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার জন্য ১৫ থেকে ২০ মিনিটের পথ হাঁটেন তিনি। এইটুকু সময়ে তার যেসব পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তা নিয়ে প্রায়ই বিষণ্ণতায় ভুগেন তিনি। পাক্ষিক অনন্যাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "প্রায়সময়ই রাস্তায় বের হলেই কোনো না কোনো কমেন্ট চারপাশ থেকে পাস হবেই। কখনো পোশাক নিয়ে পাশের থেকে কেউ কিছু বলছে, কখনো হাঁটার ধরন নিয়ে বলছে। আর আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এটা যে কেউই বলছে, যেকোনো বয়সের পুরুষই বলছে। আমার বাবার বয়সী কেউ যখন আমার পাশের থেকে কোনো একটা খারাপ কমেন্ট করে তখন মানতে সত্যিই খুব কষ্ট হয়। তবুও প্রতিদিন এসব ঘটনা অভ্যাস হয়ে গেছে।"

 

একই অভিযোগ একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সাথী আক্তারের। তিনি বলেন," যখন অফিস যাওয়ার জন্য বাসে উঠি ঐ সময়টাতে তো ছোটোখাটো একটা যুদ্ধ জয় করতে হয়। আমাদের ঢাকা শহরের বাসের পরিস্থিতি কি তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। যখন বাসে উঠবো, তখন প্রায়শই ধাক্কার সাথে সাথে বেশ কিছু অসংবেদনশীল শব্দ কানে ভেসে আসে। এটা রোজই ঘটে। প্রতিবাদ করলেও তিরস্কার সহ্য করতে হয়৷ তাই এখন এ বিষয়টিকে ডেইলি রুটিনের মধ্যেই নিয়ে নিয়েছি" 

 

তাদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, শুধু কি চলার পথেই এসব ভাষা তাদের শুনতে হয়? উত্তর আসে, শুধু চলার পথে কিংবা বাসের ভিড়ে নয়, সহকর্মীদের আলোচনায়, পারিবারিক সমালোচনায় এমনকি বন্ধুদের আড্ডায়ও এসব অসংবেদনশীল শব্দ শুনতে হয়। তাদের হেয় করেই ভাষার প্রয়োগ করা হয়। 

নির্যাতনের হাতিয়ারও এই 'ভাষা'। শারীরিক নির্যাতনের সময়ও মৌখিক নির্যাতন করা হয় নারীদের। নারীকে খারাপভাবে প্রকাশ করার জন্য যেসব শব্দ ব্যবহার হয় তার বেশিরভাগ শব্দেরই নেই পুরুষবাচক শব্দ।  ডাইনি, বেশ্যা, ছিনাল, খানকি’র মতো শব্দগুলোর মাধ্যমে নারীর প্রতি প্রতিনিয়ত নেতিবাচক মনোভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। অলক্ষ্মী, পোড়ামুখী বলে ঘরের মানুষই নারীকে হেয় করতে ছাড় দেয় না। সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটিকে 'মাল' বলে নিজেদের বেশ স্মার্ট প্রমাণ করতে মরিয়া যুবসমাজ।  

২০১৭ সালে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শহরাঞ্চলে ৮৮ শতাংশ নারী পথচারী কর্তৃক আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হন। গ্রামাঞ্চলে নারীকে কেন্দ্র করে গালি দেওয়া হয় আরও বেশি। অ্যাকশনএইড প্রায় ২ হাজার ৮০০ কেসের ওপর গবেষণা করে দেখেছে, প্রতি তিনজনে একজন নারী সহিংসতার শিকার হন। 

বর্তমানে আমাদের সমাজ আবার আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। স্মার্ট ফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও নারীদের উপর খারাপ ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনলাইনে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। 

ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীর প্রতি এসব অসংবেদনশীল শব্দ নারীকে প্রতিনিয়তই একঘরে করে দিচ্ছে, বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে অনেকে পিছিয়ে পরছে, অনেকে পুরোপুরি বিদায় নিচ্ছে, সামাজিকভাবে নারীর অবস্থান আরো নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই নারীকে শুধু লোক দেখানো সম্মান না দেখিয়ে নারীর প্রতি ভালো ভাষা প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ