ক্যান্সার নির্ণয়ে ফাতেমার অবিশ্বাস্য সাফল্য
ক্যান্সার কেবল একটি মাত্র রোগ নয়, এটি অনেকগুলো জটিল ব্যাধির সমষ্টি। পুরো বিশ্বে এ রোগের প্রকোপ খুব বেশি৷ ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। শুধু চিকিৎসাই নয় ক্যান্সার নির্ণয়ও বেশ ব্যয়বহুল। তবে এবার কম খরচে ক্যান্সার নির্ণয়ে অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফাতেমা জেরীন ফারহানা।
ক্যান্সার নির্ণয়ের এ পদ্ধতিতে কত টাকা লাগতে পারে তা এখনো নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও আনুমানিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে সম্ভব হবে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে ফাতেমা জেরীন বলেন, 'এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো প্রাকৃতিক এনজাইম ব্যবহার করা হয়। যেটা অনেকটা ব্যয়বহুল। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিতে কৃত্রিম এনজাইম ব্যবহার করায় কম খরচে নির্ণয় করা সম্ভব হবে।'
এ বিষয়ে তারা জানান, কৃত্রিম এই এনজাইমটি কোন রকম ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ছাড়া শুধু আয়রন এর লবণ এবং স্টার্চ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এতে নতুন কার্যকরী মূলক সংযোজন করা হয়েছে। যা কিনা প্রাকৃতিক এনজাইম এর মতো কাজ করছে।
ফাতেমা জেরীন ফারহানার পিএইচডি সুপারভাইজার বুয়েটের রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ফিরোজ বলেন, এই অজৈব এনজাইম দিয়ে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার বায়োমার্কার সহজে নির্ণয় করা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ভিদেরও রোগ নির্ণয় করা যাবে। তিনি আরো বলেন, এর তৈরি মূল্যও বেশ অনেক কম।
এ গবেষণায় ফাতেমা জেরীনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে শাবির সাবেক আরেক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্দিকী গবেষণাগারের প্রধান জে.এ সিদ্দিকী শামিম। তাদের গবেষণার ফলাফল চলতি মাসে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্য রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি জার্নাল, অ্যানালিস্ট এবং দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি জার্নাল, এসিএস অ্যাপ্লাইড ন্যানো মেটেরিয়ালসে প্রকাশিত হয়েছে।
ফাতেমা জেরীন ফারহানার এই অবিশ্বাস্য সাফল্যে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফারহানার এ সাফল্য আমরা শাবি পরিবার গর্বিত। ফারহানার এ উদ্ভাবন ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি ।
এ পদ্ধতি কবে নাগাদ ব্যবহার উপযোগী হবে সে সম্পর্কে ফারহানা বলেন, আমরা মাত্র ম্যাটেরিয়ালস ডেভেলপ করতে পেরেছি। ডিভাইস পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে। আর ডিভাইস পর্যন্ত যেতে পারলেই ব্যবহারের জন্য বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক দুই লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। সাধারণত ক্যান্সার তিনটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় যা বেশ ব্যয়বহুল তো বটেই পাশাপাশি ক্যান্সার নির্ণয়ও কম ব্যয়বহুল নয়। তাই ফারহানা উদ্ভাবিত এই ডিভাইস বাজারজাতকরণ সম্ভব হলে দেশে চিকিৎসাক্ষত্রে অবিশ্বাস্য এক সাফল্য আসবে নিশ্চিত।