Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবসেবার অনন্য এক প্রতীক

নীলপাড়ের সাদা রঙের শাড়ির কথা শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক মহীয়সী নারীর নাম, যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন মানব সেবায়। তিনি সকলের কাছে মাদার তেরেসা/টেরিজা নামে অধিক পরিচিত।

 

মাদার তেরেসা ১৯১০ সালে ২৬শে আগস্ট আলবেনিয়ার স্কোপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এই শহরটি। বর্তমানে এটি ম্যাসেডোনিয়া রিপাবলিকের অন্তর্গত। জন্মের পর পারিবারিক ভাবে তাঁর নাম রাখা হয় অ্যাগনিস গঞ্জা বোঝাঝিউ। তিনি ছিলেন আলবেনিয়ান বংশোদ্ভুত। এক সচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। মাত্র ৮ বছর বয়সে ছোট অ্যাগনিজ তাঁর বাবাকে হারান৷ বাবার মৃত্যুর পর মা তাঁকে লালন-পালন করেন ক্যাথলিক আদর্শে।

 

মাত্র ১২ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত  নেন ধর্মীয় জীবন যাপনের।জোয়ান ক্রাফট লুকাস রচিত টেরিজার জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট অ্যাগনিস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প বেশ ভালোবাসতেন। ১৮ বছর বয়সেই গৃহত্যাগ করেন এ নারী। ১৯২৮ সালে তিনি খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য ভারতে আসেন এবং বাকি জীবন তিনি ভারতেই ছিলেন। ১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিংয়ের এক মিশনারিতে কাজ করেন নব দীক্ষিত হিসেবে। 

 

১৯৩১ সালে মাদার তেরেসা যাত্রা শুরু করেন এক নতুন জীবনের দিকে। শপথ গ্রহণ করেন সন্ন্যাসী হিসেবে। তিনি পূর্ব কোলকাতার লেটও কনভেন্ট স্কুলে পড়াতেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ ই মে স্কুলে পড়ানোর সময় নিজ মনে শপথ করেন যে তিনি দরিদ্র-আর্তদের জীবন সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। স্কুলে পড়ানোর ফাঁকে সিস্টার তেরেসা গরিব-দুঃখী, অনাথ শিশুদের সেবা করতেন।

 

১৯৫০ সালে ৭ ই অক্টোবরে কোলকাতায় খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারনা সংঘ স্থাপন করেন মাদার তেরেসা, যার নাম দেন দ্যা মিশনারিজ অব চ্যারিটি। প্রথম ধর্মপ্রচারনার কার্যক্রম তিনি ভারত থেকে শুরু করলেও পরে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র ১৩ জন সিস্টার কে নিয়ে পথ চলা শুরু করছিলেন তিনি, যা আজ ১৩৩ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এছাড়াও ১৯৪৬ সালে তিনি অনাথ শিশুদের জন্য 'নির্মলা শিশু ভবন' প্রতিষ্ঠা করেন। ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৫টি কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র, ২০টি উদ্ধার আশ্রম ও ২টি দাতব্য  চিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি সারাদেশে ছড়িয়ে দেন তার মহীয়সী কার্যক্রম।

 

১৯৪৮ সালে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তিনি স্কুলের বেশভূষা ছেড়ে গায়ে চড়ান তাঁর অমর নীলপাড়ের সাদা শাড়ি। নিজেকে সারাজীবনের জন্য বদলে ফেলে  ক্ষুধার্ত, গৃহহীন, সর্বহারা, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গরিব দুঃখীদের সেবায় বিলিয়ে দিতে থাকেন নিজেকে। এভাবেই তিনি সিস্টার তেরেসা থেকে হয়ে ওঠেন মাদার তেরেসা।

 

১৯৬৯সালে বিবিসিতে 'সামথিং  বিউটিফুট ফর গড' শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হওয়ার ফলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয় তাঁর দাতব্য ধর্ম প্রচারণা সংঘের। আর তখনই পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মাদার তেরেসার খ্যাতি। 

 

১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান এই মহীয়সী নারী। ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান 'ভারতরত্ন' সম্মাননা পান তিনি। এবং ১৯৮৫ সালে পান রাষ্ট্রপতি পদক। মাদার তেরেসা তাঁর অর্জিত সকল অর্থ দান করেছিলেন মিশনারিজ অফ চ্যারিটিতে, শুধুমাত্র মানব কল্যাণের জন্য। তিনি বলেছিলেন, "কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়, হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমাদের  অন্তরের স্পর্শ।"

 

মাদার তেরেসা ১৯৯৭ সালে ১৩ মার্চ মিশনারিজ অফ চ্যারিটি থেকে অবসর নেন। তারপর বহুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতসহ গোটা বিশ্বের কাছে তিনি তার মানব কল্যাণের দৃষ্টান্তর রেখে গেছেন তা ইতিহাসে বিরল। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে 'সন্ত' হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় 'কোলকাতা সন্ত টেরিজা' হিসেবে আখ্যায়িত হন। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেও তিনি তাঁর মানবসেবার জন্যে অমর হয়ে রয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। 
 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ