কাশ্মীর; রূপে যেন মুগ্ধতা ছড়ায়
প্রকৃতির শক্তি অপ্রতিরোধ্য। যা এর সমকক্ষ আপনি পাবেন না। বিশাল নদী, মহিমান্বিত পর্বত, ঘন অরণ্য, গর্জনশীল ঝর্ণা, প্রকৃতির সবকিছুই সুন্দর রহস্যময় এবং পরাক্রমশালী। প্রকৃতির সংস্পর্শ আপনাকে করবে উদ্দীপিত, শান্ত অথবা এই নির্মমতাকে উপভোগের জন্য আপনাকে অচেতন করে দিবে। বলছি ভারতের সবচেয়ে উত্তর প্রদেশের হিমাচলের উত্তরের চিরবিতর্কিত জায়গা কাশ্মীরের কথা।
কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থান সমুহ:
শ্রীনগর: কাশ্মীর কেন্দ্র শ্রীনগর যেন সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে আকা শহর। কাশ্মীরের মূল সৌন্দর্যের আধার ধরে রেখেছে যে জায়গাগুলো তাদের মধ্য অন্যতম শ্রীনগর। ঝিলাম নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই সুন্দর শহরকে দিয়েছে তার পূর্ণতা। চারিদিকে ঘিরে থাকা বরফে ঢাকা বিশাল সব পাহাড়। এখানকার মূল আকর্ষণ ও প্রচুর জনপ্রিয় ডাললেক, নাগিনলেক। ডাললেক এর উপর ভাসতে থাকা হাজারো হাউস বোর্ড আর শিকারনামক নৌকা গুলো এবং লেকের উপর ভাসমান সবজি বাজার অপরূফনা আর ফাওরার বাগান। শ্রীনগরের পর্যটকরা ওয়াটার স্কীং, পাখি পর্যবেক্ষণ, গলফিং, পিম্পাল জিং পর্যন্ত ট্র্যাকিং ইত্যাদি জনপ্রিয় কার্যকলাপে মশগুল থাকেন।
গুলমার্গ: মানুষের সাধারণ কিছু শখের মধ্যে একটি হল চারিদিকে শুভ্র বরফের আচ্ছাদন দেখা। ভারতের শুধু একটি মাত্র জায়গায় সারা বছর বরফের দেখা মেলে। আর সেটি হল কাশ্মীরের গুলমার্গ। শ্রীনগর থেকে ৫২ কিমি দূরে গুলমার্গে বরফ দেখা ছাড়াও বরফে স্কীং, স্নোবোর্ডিং, গলফিং, মাউন্ট বাইকিং ইত্যাদি করা যায়। গুলমার্গ এর মূল আকর্ষণ কংদরি, সার্ফিং, আর অপরাধ শৃঙ্গের মতো দুর্দান্ত কিছু শৃঙ্গ। ট্র্যাক করে যাওয়া যায় কালীন মার্ক, নাগিন ভ্যালি, ফ্রজেনলেক, বোটা পাথরই আর বাবারিসিতে। গুলমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা গন্ডোলা তে যাওয়া যায় ক্যাবল কারে চেপে। গণ্ডোলাতে নভেম্বর থেকে এপ্রিলে গেলে দেখা যাবে বরফ এর ছড়াছড়ি।
পেহেলগাম: সবুজের তৃণভূমি আর পাহাড়ের বিশালতার হাত ধরে প্রশান্তি আর অপার্থিবতা মর্তে নেমে আসে পেহেলগাম দিয়ে। কাশ্মীরের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে পেহেলগামে আপনাকে আসতেই হবে। ছোট গোছালো এই শহরে বিরক্ত করার মতো রাখা হয়নি কোন উপাদান। পেহেলগামে ঘুরে দেখা যাবে আরোভ্যালি, বেতাবভ্যালি, বাইশারান, সিসনাগ, তুলিয়ান লেগের মতো অপরূপ কিছু জায়গা। যা মস্তিষ্কে দিবে প্রশান্তি আর চোখকে বলবে, সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। ঘোড়সওয়ারী থেকে শুরু করে ট্র্যাকিং, গলফ খেলার মত কর্মকান্ডে মেতে ওঠা যায় পেহেলগামে। কাশ্মীরের সবচেয়ে উন্নত জায়গা পেহেলগাম।
নুব্রাভ্যালি: কাশ্মীরের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন স্থান গুলোর মধ্যে একটি নুব্রাভ্যালি। শিয়োখ নদী আর শাইচান নদীর মিলন স্থানে গড়ে ওঠা এই শহরে দেখা মিলবে জলরাশি ল্যান্ডস্কেপ আর হাজার রকমের প্রাণবৈচিত্র্য। অবাক হলেও সত্যি কাশ্মীরের মত জায়গায় মরুভূমি দেখা যাবে নুব্রাভ্যালিতে। কেউ চাইলে উঠতে পারে এখানকার বিখ্যাত ব্যাকডিডেন উটের পিঠে। আরো রয়েছে নুব্রাভ্যালিতে পানামিক গ্রাম, যা এখানকার শেষ গ্রাম। এই গ্রামের পরে পর্যটকদের আর যাওয়া অনুমতি নেই।
কারগিল: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে লাদাক্ষেত্র জিলাপাশের সাথে যুক্ত কারগিলকে বলা হয় ব্রেভহার্ড মানে সাহসী হৃদয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৮০০ মিটার উচ্চতা অবস্থিত কারগিল কাশ্মীরের অন্যতম পর্যটন স্থান।কাশ্মীরের ট্র্যাকিংয়ের প্লান করেছেন, কিন্তু কারগিল কে বাদ রাখছেন এমন ট্র্যাকার পাওয়া সত্যি দুষ্কর। ট্র্যাকারের স্বর্গ কারগিলে প্রতি বছর প্রিন্সিলা লেক, সৌরভ্যালি ট্র্যাক করতে আসেন প্রচুর ট্র্যাকার, মাউন্টেইন, ক্যাম্পার আর রাফটাররা। কারগিলে দেখা মিলবে তুললিংক, মুস্ক ভ্যালি আর টাইগার হিলেন। কারগিল থেকে হাটা দূর্রতে রয়েছে গুমাকারগিল, যেখানে কারগিল সাজিয়ে রেখেছে মূলবেগোম্প, সেলগোল, উলখেনচং আর উয়াখিলের মত দুর্দান্ত সব দৃষ্টিনন্দন স্থান।
শোনমার্গ: বলার অপেক্ষা রাখে না যে কাশ্মীর ভ্রমণ পুরোটা বৃথা হয়ে যাবে কেউ যদি কাশ্মীরে শোনমার্গে না যায়। ট্র্যাকারদের জন্য বা সাধারণ পর্যটকের জন্য অল্প হাটে পথে যেতে হয়।এমন অসাধারণ সব সৌন্দর্যের ভাণ্ডার সাজিয়ে রেখেছে শোনমার্গ। শোনমার্গের মূল আকর্ষণ গঙ্গাবারলেক, কৃষাণসারলেক, ভিসানসারলেক, নারানাগ, বালতাল, আজিয়াশতুরাগ নদী। শোনমার্গ থেকে ১৫ কিমি দূরে বালতাল অমরনাথ যাত্রার বেজ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর শোনমার্গে গেলে জোজেলার পাশে যাওয়াটা অনেকটাই কর্তব্যের ভেতর পড়ে। জোজেলার পাশেই কাশ্মীর ও নাদাখক্ষ কে যুক্ত করেছে। প্রকৃতি যেখানে তার সৌন্দর্য ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেনি বিন্দুমাত্র।