রহস্যে ভরা এক বনের নাম আমাজন
পৃথিবীর একমাত্র বন যা একটি কিংবা দুটি দেশের মালিকানায় নয় বরং ৯ টি দেশের মালিকানায় রয়েছে। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশ একসাথে করলেও আয়তনে এই বনটির সমান হবে না কারণ দক্ষিণ এশিয়ার আয়তন যেখানে ৫২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার সেখানে এই সুবিশাল বনের আয়তন ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার।
প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া আর নানান সব অতি আশ্চর্যজনক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর রাজত্বে থাকা এই বনের নাম আমাজন বন। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য বন হচ্ছে আমাজন বন। সমগ্র পৃথিবীতে যত রেইন ফরেস্ট আছে তার অর্ধেকই হল আমাজন বনে। আমাজন বনের সৃষ্টি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি বছর আগে। এই বনের মালিকানা ৯ টি দেশের হলেও বনের ৬০ শতাংশ শুধুমাত্র ব্রাজিলেই অবস্থিত। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি আদিবাসী এই বনে বসবাস করে। যাদের মধ্যে প্রায় ধরনের প্রজাতি রয়েছে। এবং এর মধ্যে ৫০ প্রজাতির সভ্য মানুষ সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মানবজাতি পিগনিদের বাস এই বনে। সভ্য সমাজের কাছে এরা বনমানুষ হিসেবেই পরিচিত। আমাজন বনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীটি আমাজন নদী হিসেবে পরিচিত। আমাজন নদী আমাজন বনের জীবনীশক্তি। পেরুর আম্বিস পর্বতের নেবাদা সিমসিম নামক চূড়া থেকে এই নদীর উৎপত্তি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী।
আমাজন নদী পৃথিবীর যে কোন নদীর তুলনায় বেশি জলধারণ করে। এই নদীর প্রধান কয়েকটি উপনদীর মধ্যে ১৭ টি নদীর দৈর্ঘ্য এক হাজারেরও বেশি। আমাজন নদী পৃথিবীর পাঁচটি দেশ পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়। পৃথিবীর প্রায় ২০ ভাগ পানি এই নদী থেকেই আসে। আকারের বিশালতার মতোই আমাজনের প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের মাঝে রয়েছে বিশাল বৈচিত্র্য।
এই বনে ৪০ হাজার প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি বৃক্ষ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১৩০০ জাতির পাখি ২২০০ জাতের মাছ ৪২৭ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৭৮ জাতের সরীসৃপ ৪২৮ জাতের উভচর প্রাণী এবং প্রায় ২৫ লক্ষ জাতের পোকামাকড়।
অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিপদজনক অনেক প্রাণী এ বনে বাস করে। চিতাবাঘ, ইলেকট্রনিক ইউ, মাংসখেকো বিড়াল, বিষাক্ত ডারফ্রগ সহ অসংখ্য বিষাক্ত ধরনের সাপ রয়েছে এই আমাজন বনে। আমাজনের বিভিন্ন বড় বড় গাছের মধ্যে ভিক্টোরিয়া আ্যমাজনিয়া নামে এক ধরনের জলক পদ্ম যার নামকরণ করা হয়েছে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার নামে। এই জলক পদ্ম পাতাগুলোর আয়তন প্রায় ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।এমনকি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ওজন বহন করতে সক্ষম এই পাতা।
আমাজনের যে অংশ ব্রাজিলে পড়েছে সেই অংশের অনেক জায়গাতেই বৃত্তাকার নকশা দেখতে পাওয়া যায়। এই নকশাগুলো কিভাবে বা কারা তৈরি করলো তা আজও রহস্যে ঘেরা। ধারণা করা হয় এই নকশা করা জায়গা গুলো কবর বা সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়।