ভয়াল ব্যাধি ডায়াবেটিস!
বর্তমান সময়ে আমরা সকলেই একটি ব্যাধির সাথে পরিচিত। অধিকাংশ মানুষেই এই রোগটির সাথে পরিচিত।রোগটির কারণে ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাধে বিভিন্ন জটিল রোগ।কোন একজন মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে রোগটি। ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হল 'ডায়াবেটিস' বা 'বহুমূত্র রোগ'। তখন রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা।
অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষ গুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোন একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে। মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি এবং খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
টাইপ-১ বহুমূত্র হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন।
দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ডায়াবেটিস টাইপ-১ কে। টাইপ-১-এ অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১-বি এটিও বিটা কোষের ধংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (>130 mg/100ml)।রক্তে ছিটোনো বডির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজের নির্গমন বা গ্লুকোসুরিযা হয়।
টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। এই রোগীরা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
খাবারে চর্বির ধরনও গুরুত্বপূর্ণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়। অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ বিশ্বজুড়ে ২৪৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হল টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। রোগটি থেকে বাচার কিছু কৌশল রয়েছে।
প্রতিদিন অন্তত এক বাটি সবজি বা সালাদ খান। যার মধ্যে থাকবে গাজর, শসা, লেটুস, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি ইত্যাদি। প্রতিদিন দুপুরে বা রাতে খাবার খাওয়ার আগে এই সবজি বা সালাদ খেতে হবে। সালাদে এক চা চামচ ভিনেগারও যুক্ত করতে পারেন। ভিনেগার রক্তকে কম মাত্রায় সুগার শোষণে সহায়তা করে। আর রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমবে। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার যাদুকরী উপায় হল হাঁটাহাঁটি করা। প্রতিদিন যদি আপনি ৪০ মিনিট হাটতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকবে। ফলে ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকিও কমে আসবে।
সকালের নাস্তায় অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। ওটমিল, বার্লি,ব্রাউন রাইম,ভুট্টা,বাজরা ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা করতে হবে। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসবে। এছাড়া পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ থেকেও বাঁচাবে। চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। চিনি শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে।
ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন আজকাল চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায় নানা ধরনের ফাস্টফুড। যা দেখে হয়তো লোভ সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গার এর মতো ফাস্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে স্থুলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা এবং হৃদরোগের মতো নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এসব খাবার দেহে ইনসুলিনের মাত্রায়ও ক্ষতিকরভাবে হেরফের ঘটিয়ে দিতে পারে। যা থেকে ডায়াবেটিসও হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এমনকি সুস্থ থাকার জন্য ঠিকমত ঘুম অনেক জরুরী। ঘুম ভালো না হলে শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
ধূমপান ত্যাগ করুন স্ট্রেসের মতোই ধূমপানও নানা ধরনের মারাত্মক রোগের আরেকটি কারণ। ফুসফুস ক্যান্সার এর মতো ভয়ঙ্কর রোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিসেরও একটি কারণ ধূমপান। সুতরাং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে না চাইলে আজই ধূমপান ছেড়ে দিন।
রোগটি থেকে সম্পূর্ণ রূপে উত্তরণের উপায় এখনো আবিষ্কৃত নাহ হলেও নিয়মিত রুটিন মাফিক চলার মাধ্যমেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।সঠিক নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমেই ডায়াবেটিস মুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব হবে।