Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সার্ভাইকাল ক্যানসার: প্রতিরোধ ও প্রগতি

সার্ভাইকাল ক্যানসার, যা জরায়ুর মুখে ক্যানসার নামে পরিচিত, নারীদের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। তবে আশার কথা হলো, সময়মতো সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ক্যানসার থেকে বাঁচা সম্ভব।

সার্ভাইকাল ক্যানসারের কারণ
সার্ভাইকাল ক্যানসারের মূল কারণ হলো “হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস” (HPV)। এটি একটি যৌনবাহিত ভাইরাস, যা দীর্ঘমেয়াদে জরায়ুর কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় এই ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়, যেমন:

  • অল্প বয়সে যৌনমিলনে প্রবেশ।
  • একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা।
  • ধূমপান।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার।

লক্ষণ
সার্ভাইকাল ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে রোগ উন্নত পর্যায়ে গেলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • যৌনমিলনের পর রক্তপাত।
  • অনিয়মিত মাসিক।
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা।
  • কোমর বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা।
  • শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তি।

প্রতিরোধের উপায়
সার্ভাইকাল ক্যানসার সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব:

HPV টিকা গ্রহণ
HPV ভ্যাকসিন কার্যকরভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সাধারণত ৯-২৬ বছর বয়সী নারীদের জন্য এই টিকা সবচেয়ে কার্যকর।

নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট
প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট জরায়ুর কোষে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে কি না তা সনাক্ত করতে সাহায্য করে। ২১-৬৫ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিন বছর পরপর এই টেস্ট করানো উচিত।

নিরাপদ যৌনমিলন
যৌন সম্পর্কের সময় নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা HPV সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ
ধূমপান ত্যাগ করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

প্রগতি
আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সার্ভাইকাল ক্যানসারের চিকিৎসা আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত হয়েছে।

প্রাথমিক সনাক্তকরণ
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হলে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট এবং “HPV DNA টেস্ট” এই রোগ দ্রুত সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

চিকিৎসার পদ্ধতি
ক্যানসারের পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সার্জারি: প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যু অপসারণ করা।
  • রেডিওথেরাপি: ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে উচ্চ-শক্তির রশ্মি ব্যবহার।
  • কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষ ধ্বংসে ওষুধ প্রয়োগ।

সচেতনতামূলক কার্যক্রম
বিশ্বজুড়ে নারীস্বাস্থ্য উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন নিয়মিত ক্যাম্পেইন এবং ফ্রি হেলথ চেকআপের ব্যবস্থা করছে, যা রোগ সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ক্যানসারমুক্ত ভবিষ্যতের পথে
সার্ভাইকাল ক্যানসার প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। এই বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া, প্রাথমিক পরীক্ষা করানোর গুরুত্ব বোঝানো, এবং টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করা আমাদের দায়িত্ব। স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর প্রচারণা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে ক্যানসার মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়া এখন আর অসম্ভব নয়।

সার্ভাইকাল ক্যানসার একটি গুরুতর কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চিকিৎসা করালে এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব। তাই নিজেদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হয়ে নিয়মিত পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলাই একমাত্র উপায়। নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে এখনই এগিয়ে আসুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ