জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা কেন ও কখন প্রয়োজন?
জরায়ুমুখ ক্যানসার, বিশেষত আমাদের দেশে নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতিবছর বহু নারী এই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকেই যথাযথ সচেতনতার অভাবে আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে বর্তমানে একটি কার্যকরী টিকা রয়েছে, যা শরীরে এই ক্যানসার প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। এই ফিচারে আলোচনা করা হবে, কেন এই টিকা নেওয়া উচিত, কখন এটি নেওয়া উচিত এবং এটি কতটা কার্যকর।
জরায়ুমুখ ক্যানসারের কারণ
জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রধান কারণ হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি (HPV)। এই ভাইরাসটি মূলত যৌন সংস্পর্শে ছড়ায় এবং প্রায় ১০০টিরও বেশি ধরন রয়েছে, যার মধ্যে কিছু ধরন ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এইচপিভি সংক্রমণ যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে সাধারণত যৌন জীবনের শুরুতে এই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
এইচপিভি টিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ
এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে বর্তমানে বাজারে এইচপিভি টিকা সহজলভ্য। এই টিকা শরীরে এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, যার ফলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এইচপিভি টিকা নেওয়ার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি ৭০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব।
টিকা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এই টিকা নেওয়া উচিত। এই বয়সে শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা বেশি কার্যকর থাকে এবং যৌন জীবনের শুরু হওয়ার আগেই টিকা দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। তবে ২৬ বছর পর্যন্ত যেকোনো নারী এই টিকা নিতে পারেন। যৌন জীবনের শুরুর আগে এই টিকা বেশি কার্যকর হলেও, যারা যৌন জীবনে প্রবেশ করেছেন, তারাও এই টিকা নিতে পারেন, কারণ এটি অন্যান্য এইচপিভি ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
টিকার ধরন ও ডোজ
বাজারে মূলত দুটি ধরনের এইচপিভি টিকা পাওয়া যায়—গার্ডাসিল এবং সারভারিক্স। গার্ডাসিল চারটি ধরনের এইচপিভি প্রতিরোধ করে, আর সারভারিক্স দুটি ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর। ৯-১৪ বছর বয়সীদের জন্য ২ ডোজ টিকা এবং ১৫-২৬ বছর বয়সীদের জন্য ৩ ডোজ টিকা নেওয়া হয়। প্রতিটি ডোজ কয়েক মাসের ব্যবধানে নেওয়া হয়।
কতটা কার্যকর এই টিকা?
এইচপিভি টিকা ৭০-৯০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। টিকা নেওয়ার পরে শরীরে এইচপিভির বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে ওঠে, যা জরায়ুমুখের কোষে ভাইরাসের প্রভাব বিস্তার করতে বাধা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে এইচপিভি সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদীভাবে কাজ করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এইচপিভি টিকা সাধারণত নিরাপদ, তবে এর কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি নেওয়ার পর সামান্য ব্যথা, ফোলাভাব, মাথাব্যথা, অথবা হালকা জ্বর হতে পারে, যা কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখ ক্যানসারের একটি কার্যকরী প্রতিরোধক, যা সঠিক সময়ে নেওয়ার মাধ্যমে নারীদের সুস্থ ও ক্যানসারমুক্ত জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই সঠিক বয়সে এবং সঠিক সময়ে এই টিকা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের নারীরা ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।