Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমরা অনেকক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছি। জাতীয় জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়েছি আমরা। দীর্ঘ এই ৫০ বছরে আমাদের খেলাধুলায় সাফল্যের গল্প নেহাত কম নয়। মেয়েদের খেলাধুলাও ব্যতিক্রম নয়, মেয়েরা অনেকটা পথ এগিয়েছে। ক্রিকেট কি ফুটবল অথবা অ্যাথেলেটিকস হোক নারীদের সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে খেলাধুলায় মেয়েদের সুযোগ নিয়ে কিন্তু এখনো প্রশ্ন রয়েই গেছে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে তাদের  এখনো রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব। সত্যি বলতে, আমাদের দেশে মেয়েদের খেলায় এখনো রয়ে গেছে বাধার স্তূপ।

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

শুরু থেকেই একজন মেয়েকে সম্মুখীন হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতার। আর এই প্রতিবন্ধকতাগুলো যেন আসে ধাপে ধাপে। প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকেই। যদিও ফোর-জি যুগে রয়েছি আমরা, সবকিছুই এখন আধুনিক। আমাদেরই দুইজন নারী এভারেস্ট জয় করেছেন। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়েও মেয়েদের খেলাধুলায় আসতে দিতে চায় না পরিবার। আর পরিবার উৎসাহী না হলে একটি মেয়ের পক্ষে খেলাধুলায় আসা বা খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভবই। 

 

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

একসময় খেলাধুলায় অনেক সচ্ছল পরিবারের মেয়েরা আসত। এখন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই বেশি আসছেন খেলায়। তাদের লক্ষ্য কোন একটি সংস্থায় চাকরি পাওয়া। সেই চাকরি থেকে প্রাপ্ত আয়ে সংসার চালানোর কঠিন সংকল্প নিয়েই খেলায় নাম লেখানো। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থও তারা খেলাধুলা করে পায় না। ফলে খেলার প্রতি তাদের উৎসাহ কমে যায়। মেয়েরা জানে, খেলায় এলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে না। খেলার প্রতি ঝোঁকটা কমে যাওয়ার এটিও একটা কারণ। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারলে মেয়েদের খেলাধুলা বেশি দিন টিকবে না। এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। মেয়েরা খেলাধুলায় খুব বেশি আসবেও না সামনে। কেননা, বর্তমানে জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন। জীবিকার জন্য মেয়েরা খেলা থেকে ভালো অর্থ না পেলে নিরুৎসাহী হবেই। সুতরাং মেয়েদের পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে। আর্থিক ব্যাপারটা বাড়ানো গেলে আরও বেশি মেয়ে খেলায় আসবে আমার বিশ্বাস। স্পন্সরদের উচিত মেয়েদের খেলাধুলার পাশে দাঁড়ানো। অথচ সব সময় দেখা যায়, ছেলেদের বড় বড় টুর্নামেন্ট (ফুটবল, ক্রিকেট) টাকা দেয় স্পন্সর। ছোট ছোট খেলা স্পন্সর করতে চায় না। ফলে ছোট খেলার ছেলেমেয়েদের আর্থিক যোগানটা সেভাবে হয় না।

 

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

মেয়েরা খেলাধুলা করলে চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে। আর চেহারা নষ্ট হয়ে গেলে ভালো বিয়ে দেওয়া যাবে না—এমনটা মনে করে অনেক পরিবার। এটিও বড় বাধা মেয়েদের এগিয়ে চলার পথে। তা ছাড়া মেয়েদের খেলাধুলার উপযোগী পরিবেশও কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? উত্তরে বলব, আগের তুলনায় পরিবেশ হয়তো কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত মাত্রায় যায়নি। পাশাপাশি স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যে টুর্নামেন্টই হতো, মেয়েদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ত। এখন এই টুর্নামেন্টগুলো হারিয়েই গেছে বলা যায়।

 

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

একই সঙ্গে খেলাধুলায় মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। আমাদের সময় মেয়েদের নিরাপত্তা অনেক ভালো ছিল। ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা শোনা যেত না, এখন শোনা যাচ্ছে। কারণ, এখন বেশির ভাগ মেয়েই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা, প্রতিবাদের সাহস তাদের থাকে না। ফলে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। আগে খেলাধুলায় সচেতন মেয়ে বেশি থাকায় তাদের সঙ্গে এ ধরনের কাজকর্ম করার সাহস কমই পেতেন সংগঠকেরা। কিন্তু এখন মেয়েরা ভয়ে চুপ থাকে বেশি। ওরা মনে করে প্রতিবাদ করলে খেলার সূত্রে পাওয়া চাকরিটা যদি চলে যায়! তাই সবকিছু মেনে নিয়েই খেলায় থেকে যায় মেয়েরা।

 

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

আবার মেয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে কমিউনিকেশন গ্যাপ। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেয়েদের যোগাযোগে বড় ধরনের শূন্যতা রয়েছে। এখনকার মেয়েরা বেশির ভাগই ফেডারেশনের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পারে না, যেহেতু তারা বেশির ভাগই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসছে, তাই নিজের কোন চাওয়া বা দাবি আদায় করে নিতে পারে না। নারী খেলোয়াড়দের এই অবস্থা দেখে নতুনেরা আসতে চায় না আর খেলায়। এলেও কিছুদিনের মধ্যে অনেকে ঝরে যায়। অনেক সম্ভাবনাময় মেয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা পায় না। 

 

খেলাধুলায় নারীদের রয়েছে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা

 

তবে সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে এতো বাধা পার করেও অনেক নারী খেলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ক্রিকেটসহ প্রায় সকল মাঠেই তারা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারলে সামনে আরো অনেক সফলতার মুখ দেখতে পারবে বাংলাদেশ।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ