কেমন হবে করোনা পরবর্তী শিক্ষার পরিবেশ?
লকডাউনে প্রভাবিত হওয়া খাতগুলোর মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অফলাইনের প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাসকে নিয়ে আসা হয়েছে অনলাইন ভার্সনে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে৷ আশা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এখানেই সবথেকে বড় প্রশ্নের আবির্ভাব। কেমন হবে এর পরবর্তী ধাপ? আর এ বিষয় নিয়েই পাক্ষিক অনন্যার নিয়মিত আয়োজন 'সাম্প্রতিক' এ 'নিউ নরমাল লাইফ: কেমন হবে শিক্ষার পরিবেশ?' বিষয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ড. স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ড. শেখ শফিউল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং কাঞ্জিলাল রয় জীবন, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উপস্থিত সকলেই করোনা কালীন সময়ে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব এবং পরবর্তীতে কেমন হবে শিক্ষার পরিবেশ, কিভাবে সামাল দেয়া সম্ভব এই পরিস্থিতি এসব বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
ড. স্বাধীন সেন বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আগেও অনেকটা ভঙ্গুরই ছিল, করোনায় আমাদের চোখের সামনে সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তাই এখন সময় এসেছে নতুন করে সব সাজিয়ে নেয়ার।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো উন্নত করা দরকার। ক্লাসেও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার,কারণ সেখানে অডিও ভিজুয়াল মেটেরিয়াল ব্যবহার করা সম্ভব হয়। তিনি আরো বলেন, করোনা কালীন এ সময়ের জন্য পাঠ্যক্রম ব্যবস্থা পাল্টানোর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটাকে আমরা নতুন একটা শিক্ষা বলতে পারি।
একই প্রসঙ্গে ড. শেখ শফিউল ইসলাম বলেন, প্রায় একবছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে শিক্ষার্থীরা। এর কারণে অনেকটা সামাজিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অনেকের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট এবং হতাশা তৈরি হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে তাদের হতাশা দুর হবে, আবার হয়তো আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবে।
তিনি জানান এ বিষয়ে সবথেকে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসতে হবে, তাদের সাথে মিশতে হবে। শুধু শিক্ষকের ভূমিকাই নয় শিক্ষক কে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে, মোটিভেশন দিতে হবে, ভালোভাবে ওয়েলকাম করতে হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের নেগেটিভ নয় পজেটিভ দিকগুলো জানাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেকের মনো সামাজিক বিষয়ে ট্রেনিং নেই, কিন্তু তাও যে শিক্ষা আছে, সেটা প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো ভেবে তাদের পাশে দাঁড়ালে একটা ভালো পরিস্থিতি আনয়ন সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাঞ্জিলাল রয় জীবন বলেন, ক্লাসরুমে শুধু নয়, করিডোর- চায়ের আড্ডা থেকে অনেক জায়গাই ছিলে আমাদের শিক্ষা অর্জনের জায়গা । কিন্তু অনলাইন এডুকেশনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণি বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। যাদের পড়াশোনা ল্যাব কেন্দ্রিক তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে শিক্ষাক্ষেত্রের ক্ষতি পূরণ করতে সরকারকে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। তবে হয়তোবা করোনা কালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।