অদম্য ইলমী
আজকে পরিচয় করিয়ে দিবো এমনই একজন মানুষের সাথে, যিনি সমাজের সকল বাধা বিপত্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও নিজ অনুপ্রেরণায় জীবন খাতায় নাম লিখিয়েছেন রেডিও জকি হিসাবে। বলছি জান্নাতুল ইলমী সূচনার কথা। অসংখ্য রীতিনীতি, নিয়ম কানুনের এই শহরে তিনিও বড় হয়েছেন বাকি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো। মেয়ে হয়ে জন্মালেও ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন কিছু করার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার পর, অসংখ্য পছন্দনীয় বিষয়ের ভিড়েও সবাই চমকে দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মনোবিজ্ঞান বিষয়ে। মানুষ ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা, এমন একটা অসাধারণ বিষয়কে আপন করে নিয়েছেন। পরিবারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়েও নিজ আগ্রহে, নিজের পছন্দকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্মানের সহিত স্নাতক শেষ করে রেডিও জকি হিসেবে কালারস এফ এম এ যোগদান করেন তিনি।
শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা, উপস্থাপনা করা এবং ছোটবেলার ছোট্ট রেডিও নিয়ে আরজে আরজে খেলা তাকে এতটাই আকৃষ্ট করতো যে, বড় হয়ে এই ইচ্ছাশক্তির বাস্তবায়ন একরকম নেশায় পরিণত হয়। পরবর্তীতে অজস্র সাক্ষাৎকার নেয়াসহ অনেক চমৎকার অনুষ্ঠান করার এবং নেটওয়ার্কিং বাড়াবার সুযোগগুলোকেও কাজে লাগিয়েছেন। তবে এই যাত্রা তার জন্য খুব একটা সুগম ছিল না। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত তাকে তার স্বপ্ন থেকে আলাদা করতে চাইলেও, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবলের কারণে জান্নাতুল ইলমী সূচনা তার কর্মক্ষেত্রে সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনি রেডিও জকি ছাড়াও এপেক্স ফুটওয়্যারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট হিসাবে নিযুক্ত আছেন। ইলমী বলেন, কাজের পরিসর আরও বাড়ে যখন মাস্টার্স শেষে এপেক্সে প্রথম ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। দশ হাজার শ্রমিক আর সহস্র অফিসার নিয়ে কাজ। বয়স আর অভিজ্ঞতার চাইতে দায়িত্বভার বেশি হওয়ায় শুরুতে ভয় লাগলেও একজন আরজে হবার অভিজ্ঞতা এখানে অনেক সাহায্য করেছে। পাবলিক স্পিকিং, মাল্টি টাস্কিং, এমপ্যাথির মতো স্কিলগুলো আমার সেখান থেকে হাতে কলমে শেখা।
আর তাই সবসময় বিশ্বাস করা উচিৎ, কোনো কাজ (ছোট বা বড়), কষ্ট, কথা, মুহূর্ত, পরিবেশ, বই, অভিজ্ঞতা এবং মানুষ – জীবনে ফেলনা না। বেলাশেষে প্রাপ্তি তাদেরই যারা রাস্তার শেষটা দেখতে নিবেদিতভাবে চলতে থাকে। পথ যত দুর্গমই হোক না কেন। মানসিক জোর ও নিজের সবলতা ও দুর্বলতা জানা, নিজেকে চেনা, নিজে কি চাই তা জানা এক্ষেত্রে অনেক জরুরি। স্বপ্নকে দেখতে হয় নিজের চোখ দিয়ে, অন্যের চোখে নয়।