Skip to content

২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে প্রতি বছর ১৫শ’ অটিস্টিক শিশুর জন্ম

শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা অটিজম। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ অটিজম আক্রান্ত

১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে ‘অটিজম’ শব্দটি ব্যবহার করেন। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, যেখানে ব্যক্তির মধ্যে বাইরের জগত সম্পর্কে সামান্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ পরিচালিত হয় তাতে দেশে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হচ্ছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

আজ (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ দিনটিকে পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে- ‘নারী ও বালিকাদের ক্ষমতায়ন, হোক না তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’।

দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘ সদর দফতরে এ বছর বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে অটিজম নিয়ে নারী ও মেয়ে শিশুদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। অটিস্টিক শিশুর বিকাশ তিনটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা, অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা বা কে কী করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা এবং অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা। এছাড়া যোগাযোগ স্থাপনে বাধা, কথা বলতে না শেখা, কোনোমতে কথা বলা, কথা বলতে পারলেও অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা করতে সমর্থ না হওয়া ইত্যাদি।

অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে আচরণের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। অনেকে পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে। অর্থাৎ একই কাজ বারবার করে।

অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও আচরণের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন- নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া, কারও আদরও পেতে না চাওয়া, বিশেষ আচরণ বারবার করা ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, অটিজমের পেছনে দুটি কারণ রয়েছে- ১. জিনগত সমস্যা, ২. পরিবেশগত সমস্যা। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ডিএনএ জিনে ‘কপি নাম্বার অব ভেরিয়েন্ট’ নামক ত্র“টি বহন করে।

পরিবেশের বিষাক্ত উপকরণ জিনের øায়ুকোষ ধ্বংস করে। যেসব রাসায়নিক দ্রব্য অটিজমের জন্য দায়ী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মার্কারি, লেড, কীটনাশক। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি একটি নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিষ্কের সমস্যা।

কারণ কখনও কখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। এরমধ্যে মস্তিষ্কের কোনো রূপ গঠনগত ত্র“টি, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়া, মস্তিষ্কের নিউরোকেমিকেলের অসামঞ্জস্যতা, অন্তক্ষরা অন্যতম।

অটিজম আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু যুগান্তরকে বলেন, অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিৎসা নিওরোবিহেভিওরাল থেরাপি।

অতিরিক্ত আচরণগত সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল চিকিৎসা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা প্রদান। দেখা গেছে স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার অটিজম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা গেলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা ও শিক্ষা পেলে রোগের উপসর্গ অনেকাংশে কমানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকা, গান, গণিত বা কম্পিউটারে প্রচণ্ড দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে তারা সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারে।

এদিকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস, অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা ও øেহ-ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ