মশাল হাতে নারীদের পথ দেখাচ্ছেন ইয়াসমিন

ভারতের এক আইপিএস অফিসার সুরভী গৌতম টেড টকে নিজের গল্প তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান, মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে কিভাবে সফলতার উচ্চশিখরে উঠে এসেছেন। তার জন্মের সময় বাবা-মা ছাড়া তেমন কেউই খুশি ছিলেন। তার বেড়ে ওঠা, চলাফেরায় সমাজের লোকজনও দেখতেন ভিন্ন চোখে। কিন্তু কয়েকবছর পর সেই একই নারী আর একই গ্রাম তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে একটি স্লোগানে, ‘ গ্রামের মেয়েদের হওয়া উচিত সুরভীর মতো।’ ঠিক এমনি ঘটনার প্রতিফলন রয়েছে আমাদের আজকের গল্পের ইয়াসমিন হুসেনের জীবনকাহিনিতে।
ইয়াসমিনের যখন বয়স কম ছিল তখন মানুষ তাকে দেখে বলত, তিনি নাকি ছেলেদের মতোই। এর পেছনে কারণ ছিল তিনি ফুটবল খেলতেন। তাকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করা লোকেদের মন্তব্য এখন বদলেছে। সেই লোকগুলোই এখন তাকে তার কাজের জন্য বাহবা দেয়। সেই আইপিএস অফিসার সুরভীর মতোই তিনি এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। যারা ইয়াসমিনের নাম এখনো শোনেননি স্বভাবতই তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, কে এই ইয়াসমিন?
সিলেটের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের সাদিপুরের মেয়ে ইয়াসমিন। ইয়াসমিনের জন্ম যদিও লন্ডনে। তবে বাংলাদেশি সত্তাকে বিদায় দেননি নিজের ভেতর থেকে। মনেপ্রাণে একজন খাঁটি বাঙালি তিনি। তার বাবা সৈয়দ নজরুল হুসেন, মা কামরুন্নেছা হুসেন এখন লন্ডনেই থাকেন। তিন সন্তানের মা ইয়াসমিন।
তিনি মনে করেন, তিনি কোচিং না করালে তাদের পুরুষদের অধীনে কোচিং করতে হতো। মুসলিম পরিবার তাদের মেয়েদের পুরুষদের কাছে প্রশিক্ষণে পাঠাতে খুব একটা রাজি হবে না।
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের কল্যাণে বাংলাদেশে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটি ও বিশ্বব্যাপী আলোচনায় তিনি। কারণ গেমসের মশাল উঠেছিল ইয়াসমিনের হাতে। ২০২১ সালের অক্টোবরে মশাল রিলে শুরু হয়। ৭২ দেশে, ২৯৪ দিন ঘুরে মশাল এসেছে যুক্তরাজ্যে। গত ৫ জুন লন্ডনের অলিম্পিক পার্কে ইয়াসমিন মশাল হাতে ছুটেছেন পাঁচ মিনিট। একাধারে ফুটবল কোচ, রোল মডেল ও গেমসের মশালবাহক ইয়াসমিন।

মশালবাহকদের আট জনকে আলাদাভাবে গণমাধ্যমের সামনে এনেছিল আয়োজক কমিটি। ৮ হাজার নমিনেশন ছিল। ২ হাজার জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। তা থেকে মাত্র ৮ জনকে মিডিয়া সেশনের জন্য নির্বাচন করা হয়। ৮ হাজার থেকে আট জনের মধ্যে নির্বাচিত হওয়া মোটেই মুখের কথা নয়। আর তাই তো বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে এলো তার নাম। দেশের মানুষের ভালোবাসায়ও সিক্ত হচ্ছেন তিনি। একসময় ফুটবল খেলার জন্য যে কমিউনিটিতে তিনি বসবাস করেছেন, সেখানকার মানুষের কাছে কথা শুনতে হয়েছিল তাকে। আজ তারাও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সী এই নারীকে।
যদিও বর্তমানে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত নেই তিনি। ফুটবল খেলা ছাড়লেও ২০১৮ সাল থেকে মেয়েদের কোচিং করাচ্ছেন ইয়াসমিন। তিনি লেভেল ওয়ান ফুটবল কোচ। প্রতি সপ্তাহে ৮০ জন মেয়েকে কোচিং করান ফ্রেনফোর্ডর্ ক্লাবে। মূলত মুসলিম মেয়েদের ফুটবল খেলায় অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাতেই কোচিংয়ে আসা ইয়াসমিনের। তিনি মনে করেন, তিনি কোচিং না করালে তাদের পুরুষদের অধীনে কোচিং করতে হতো। মুসলিম পরিবার তাদের মেয়েদের পুরুষদের কাছে প্রশিক্ষণে পাঠাতে খুব একটা রাজি হবে না।
ছোটোবেলা থেকে তার কমিনিউটিতে অনেক আজেবাজে মন্তব্য শুনেও তিনি দমে যাননি। নিজেকে প্রস্তুত করছেন এমনভাবে যে, একসময় যাদের বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছেন, এখন তাদের কাছেই রোল মডেল হয়েছেন। কোনো মেয়েই যেন থেমে না যায়, সেই চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে। ইয়াসমিন শুধু মাঠে নয়, মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন নারীদের জন্য।
অনন্যা/জেএজে