ইশরাত: পদ্মা সেতুর একমাত্র নারী প্রকৌশলী
আমরা ইশরাত জাহানকে দেখে অনুপ্রাণিত হই। আমাদের নারীরা আরও বেশি কর্মবীর হওয়ার প্রত্যাশা রাখেন। তবে সব নারী ইশরাত জাহানের মতো কিছু করে ফেলার সাহস করে উঠতে পারেন না। কারণ নারীর নিজেকে কর্মবীর করে গড়ে তোলার আগে নিজেদের পারিপার্শ্বিকতার বেড়াজালকে উপেক্ষা করতে হয়। পরিবার ও সমাজকে নিজের ভালো মন্দ লাগার বিষয়ে পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ারের কথা জানান দিতে গিয়ে জবাবদিহিতা করে আসতে হয়।
এরপরও যদি নারীরা এগিয়ে যেতে পারে, নিজের মতো কিছু করতে পারে, তখন হয়তো তারা নিজের পায়ের তলার ভিত্তি মজবুত করতে পারে। পরিবারের সহায়ক ভূমিকা হয়তো কপালে সবার জোটেও না। তখন নারীরা নিজের দেখা পথ বাদ দিয়ে অন্যের দেখানো পথ বেছে নিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ সেটা সহজ কি না জানা নেই, তবে এখানে পরিজন পরিবার সঙ্গে তো থাকে।
তবে বাংলাদেশে এর অনেক ভীন্নরূপও দেখতে পাওয়া যায়। নারীরা টেকনিকাল খাতে এগিয়ে না থাকলেও মেডিকেল খাতে শিক্ষায় অংশগ্রহনের হার অনেক বেশীই । কিন্তু সেখান থেকে হয়তো প্র্যাক্টিসিং ডাক্তার অনেক কমই থাকেন।এছাড়াও অন্যান্য খাতে নারীদের অংশগ্রহন আছে। অনেক পরিবার এমনও আছেন যাদের কাছে নিজের সন্তানের ক্যারিয়ার আগে। শিক্ষা ও চাকরির গুরুত্ব সেখানে সবচেয়ে বেশী থাকে।
এমন পরিবার প্রতিটি ঘরে হলে হয়তো নারীরা আরও এগিয়ে যেতে পারতো । কিন্তু নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নারীর নিজের অর্জনকেই মুখ্য করে দেখা উচিত। কে কতটুকু সাহায্য করলো কিংবা ডিমোটিভেট করলো, তারচেয়েও দৃষ্টান্তমূলক বিষয় হচ্ছে, নারী কী অর্জন করলো ?
দিনাজপুর পলিটিকাল ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করা ইশরাত জাহান পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইলিং পাইপের মেজরমেন্ট করেছেন। চীনের বিশাল বিশাল ইস্পাতের পাতগুলো ১ হাজার ৫০০ টন। এই ক্ষমতার বেন্ডিংগুলো মেশিনে মুড়িয়ে সিলিন্ডার বানানো হয়। এরপর ছোট ছোট সিলিন্ডার আগুনের তাপে জোড়া লাগিয়ে পাইলিং পাইপ তৈরি করা হয়।
সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইলিং পাইপের মেজরমেন্ট আমার হাতে করা। এক সেন্টিমিটার এদিক-সেদিক হয়নি। প্রতিটি সিলিন্ডার সঠিক মাপে তৈরি করেছি।’
পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পে আমারো সামান্য অবদান আছে এটা আমার বলতে ভালো লাগে।’
২০১৫ সালে পদ্মা সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে যোগ দেন ইশরাত জাহান। তখন থেকেই ডরমিরেটরিতে থেকে অন্য কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। পরিবার ছাড়া কাটিয়েছেন অনেক সময়। দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য্যের সঙ্গে কাজ করার মতো অসাধারণ সাহসিকতা দেখিয়েছেন তিনি।
জীবনের সাত বছর একটা প্রজেক্টের জন্য কাজ করাও হয়তো সহজ ছিল না। অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ৭ বছর। তাই ইশরাত জাহান একজন অনন্য নজির হয়ে থাকবেন এদেশের সব মানুষের জন্য।