Skip to content

২০০ বছরের পুরোনো হাটে অর্ধেক দামে শাড়ি-কাপড়

২০০ বছরের পুরোনো হাটে অর্ধেক দামে শাড়ি-কাপড়

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির নাম শুনেনি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। জামদানি, বেনারসি কিংবা প্রিন্ট শাড়ি সবকিছুর মিলনস্থল যেন করটিয়ার কাপড়ের হাট। দুই শতাধিক বছর ধরে চলছে এই হাট। এখনো এর জনপ্রিয়তা অটুট।

টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরের এই করটিয়া হাট শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে। তখনকার জমিদার পরিবার বিশেষ করে ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ওরফে চাঁদ মিয়ার উদ্যোগেই হাটটি গড়ে ওঠে। তখন করটিয়া ছিল নদীবন্দর। একসময় কয়েক সপ্তাহব্যাপী বসতো এই হাট। এখন এই হাট সপ্তাহে তিন দিন বসে।

হাজারো ব্যবসায়ীর মিলনমেলা
মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত চলে পাইকারি বেচাকেনা। আর বৃহস্পতিবার চলে খুচরা বিক্রি। প্রায় ৪৫ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই হাট। এখানে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো ব্যবসায়ী ও ক্রেতা।

এখানে পাওয়া যায় নানা ধরনের শাড়ি টাঙ্গাইল, বেনারসি, জামদানি, ছাপা শাড়ি, থ্রি-পিস, থান কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, শার্ট-প্যান্ট পিস, গামছা, ওড়না, তোয়ালে, লুঙ্গি।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, পাইকারি দামে শাড়ি-কাপড় কেনা যায় অর্ধেক দামে। পরে এসব কাপড় রাজধানীর ইসলামপুর, মেগাশপ কিংবা অনলাইন স্টোরে খুচরা দামে বিক্রি হয়।

টাঙ্গাইলের পাথরাইল, বল্লা, কালিহাতী, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, নরসিংদী এমনকি ঢাকার ইসলামপুর থেকেও কাপড় আসে এই হাটে। এখানকার শাড়িগুলোর চাহিদা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বেশ চাহিদা রয়েছে এই শাড়িগুলোর। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য—সবখানেই রপ্তানি হয় টাঙ্গাইল শাড়ি।

এই হাট ঘিরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেউ তাঁতি, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ পরিবহনকর্মী সবাই জড়িত এই বিশাল কাপড় বাজারের সঙ্গে।

করোনা, সুতার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট এসব কারণে কিছু তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারপরও বহু মানুষ এখনো এই ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন পুরোনো দিনের এই ঐতিহ্য।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক ব্যবসায়ী মোখলেছউদ্দিন বলেন, ‘আগের মতো ভিড় এখন আর হয় না। তবে যারা সঠিক দামে ভালো পণ্য খুঁজেন, তারা এখানেই আসেন।’

এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে টাঙ্গাইলের করটিয়া হাট হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম প্রধান কাপড়ের বাজার যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মানুষের জীবনের গল্প মিশে আছে একসূত্রে।