হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন জরুরি কেন?
থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের দেহের বিপাক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলো দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। কিন্তু কখনো কখনো থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যার ফলে হাইপারথাইরয়েডিজম বা হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যার জন্য শুধু চিকিৎসাই যথেষ্ট নয়, খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা জরুরি।
থাইরয়েডের সমস্যার ধরন
থাইরয়েডের সমস্যা সাধারণত দুই প্রকার:
হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism): থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন কম নিঃসৃত হলে ঘটে। এতে বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism): থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত হলে ঘটে। এতে বিপাক প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হয়ে যায়।
থাইরয়েডের সমস্যা হলে কী খাবেন
হাইপোথাইরয়েডিজমে খাদ্যাভ্যাস
হাইপোথাইরয়েডিজমে বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, তাই কিছু বিশেষ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার।
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার: আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ, এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ খাবারে যোগ করুন।
- সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: সেলেনিয়াম থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ব্রাজিল নাটস, সূর্যমুখীর বীজ, টুনা মাছ, এবং ডিমে এটি পাওয়া যায়।
- দস্তা (জিঙ্ক): জিঙ্ক থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। মুরগির মাংস, গো-মাংস, এবং কুমড়ার বীজ জিঙ্কের ভালো উৎস।
- উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার: হজমশক্তি বাড়াতে ফল, সবজি, এবং পুরো শস্য খাবেন।
হাইপারথাইরয়েডিজমে খাদ্যাভ্যাস
হাইপারথাইরয়েডিজমে বিপাক দ্রুত হওয়ায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।
- ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি: অতিরিক্ত হরমোনের কারণে হাড় দুর্বল হতে পারে। তাই দুধ, দই, চিজ, এবং সূর্যের আলোয় সময় কাটান।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: ফল, সবজি, বেরি এবং চা খেলে শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো কমে।
- প্রোটিন: পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডাল, বাদাম, মাছ, এবং ডিম খাওয়া উপকারী।
থাইরয়েডের সমস্যা হলে কী খাবেন না
হাইপোথাইরয়েডিজমে এড়িয়ে চলুন
- গোইট্রোজেনিক খাবার: বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, সয়াবিন, এবং কাঁচা শালগম থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার: ভাজা খাবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার থাইরয়েডের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমে এড়িয়ে চলুন
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: কফি, চা, এবং সফট ড্রিংক অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত আয়োডিনযুক্ত খাবার: সামুদ্রিক খাবার এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ কম ব্যবহার করুন।
- মশলাযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার বিপাক আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিছু সাধারণ অভ্যাস
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে দিনভর পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যেকোনো ডায়েট বা খাবারের তালিকা শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।
থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার নির্বাচন ও কিছু খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে এই সমস্যাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে প্রতিটি দেহ আলাদা, তাই নির্দিষ্ট সমস্যা অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।