ডায়েট মানেই পছন্দের খাবারগুলোকে ব্লকলিস্টে পাঠানো নয়
মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও ধর্মের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাবার খাওয়া। বেঁচে থাকতে হলে খাবার খাওয়া আবশ্যক। কিন্তু এই খাদ্যের মধ্যেও রয়েছে নানান ঝামেলা। কোনো খাবার খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে আবার কোনো কোনো খাবারে স্বাস্থ্য খারাপও হয়। শরীর স্বাস্থ্য দেহের সমঝোতা বা সংযমের জন্য খাবারদাবার নিয়মের মধ্যে খাওয়াই হচ্ছে ডায়েট। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষগুলো কিন্তু খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি নিয়ম পালন করে। অনেকে তো নিজের পছন্দের খাবারগুলোকেও দৈনিক খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। মজার মজার পছন্দের খাবারগুলো শুধু চোখেই দেখেন চেখে দেখার সাহস পান না। অনেকে তো চোখে দেখলেও ভাবেন মোটা হয়ে যাচ্ছেন বা স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সত্যি বলতে মোটা হওয়াটা মন্দের না। তবে যদি একান্তই মোটা হতে বা হয়ে না থাকতে চান তবে পছন্দের খাবারগুলোকে একদম তালিকা থেকে বাতিল না করেও কিন্তু ডায়েট চার্ট তৈরি করতে পারেন।
বাড়তি ওজন কমাতে অনেক ডাক্তার ও পরামর্শ দেন মিষ্টি ও মশলাজাতীয় খাবার পরিহার করতে কিন্তু বাঙালি হিসেবে এই দুই একান্ত একান্তই প্রয়োজনীয় দুই জাতীয় খাবার কিভাবে পরিহার করা যায়? তাই দেখা যায় গ্যাস্ট্রিক রোগীরাও সুযোগ পেলে তৈলাক্ত ভাজা পোড়া খাওয়া থেকে দূরে থাকেন না, ডায়বেটিস রোগীরা মিষ্টি জাতীয় খাবার দেখলে লোভ সামলাতে পারেন না একটু চেখেই ফেলেন। খাবার এড়ানোর পরিবর্তে যে ডাক্তার পরামর্শ দেয় না খেতে বরং তাকেই এড়ানো হয়। তবে অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আয়ত্তে রাখার জন্য পছন্দের খাবার যে একদমই খাওয়া যাবে না তা নয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই মাছ মাংস খুবই পছন্দ করেন কিন্তু অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার ভয়ে তা বর্জন করেন বা কম খান। এই যারা মাছ মাংস বেশি খেতে চান তারা বেশি বেশি করে অবশ্যই মাছ মাংস খেতে পারেন তবে তার সাথে ভাত খাওয়ার পরিমাণটা একটু কমিয়ে দিলেই চলবে। অনেকেই একটু মিষ্টি আম পছন্দ করেন, তারা খুব বেশি না; তবে পরিমাণমতো খেতে পারেন, তবে ঐ যে ভাতের পরিমাণটা কমাতে হবে। পছন্দের খাবার খাওয়া যাবে তবে অতিরিক্ত নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণমতো। মনভরে খাওয়া যেতেই পারে; কিন্তু একেবারে পেটভরে বেশি বেশি নয়। আমি মনে করি পেটভরে ঘনঘন পছন্দের খাবার খেলে একটা সময় পছন্দের খাবারও আর ভালো লাগে না। তাই কদিন পর পর নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়াই উত্তম। এতে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে পছন্দের খাবারও খাওয়া হবে। একঢিলে দুই পাখি মারা বা সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না ব্যাপারটা এমন দাঁড়াবে। আবার যারা একটু খরচ করার সামর্থ্য রাখেন। তারা বাজারে ডায়েট চিনি দিয়ে বাসায় পছন্দের মিষ্টি খাবার তৈরি করতে পারেন। এ চিনি মূলত ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে বানানো। যারা তৈলাক্ত খাবার ভালোবাসেন তাদের জন্য ও বাজারে কলেস্ট্রোল ছাড়া তেল পাওয়া যায় সে তেল দিয়ে তেলজাতীয় খাবার রান্না করে খেতে পারেন। এ তেল হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য একদমই ক্ষতিহীন।
খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত জরুরি দুটি বিষয়ের দিকেও নজর দেওয়া উচিত যেগুলো হচ্ছে ব্যয়াম ও ঘুম। দৈনিক শারীরিক ব্যয়াম করা উচিত দৈনিক সকাল বিকাল ব্যায়াম করলে শরীর স্বাস্থ্য অবশ্যই ভালো থাকবে তাছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যের প্রতি প্রভাব ফেলে। যেখানে অতিরিক্ত ঘুম করে স্বাস্থ্য খারাপ তাই সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
পরিশেষে এ বলা যায় ডায়েট মানেই পছন্দের খাবারগুলোকে বাদ দেওয়া নয়। পছন্দের খাবারগুলোকে পরিমাণমতো এবং একটু কৌশলের মাধ্যমে খেয়েও নিয়মিত ডায়েট করা যায়, স্বাস্থ্য সুন্দর রাখা যায়। শুধু ইচ্ছাটা থাকতে হবে। কারণ মানুষের ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড়ো আর কিছু নেই।