সবুজে ঘরের স্বস্তি
গরমের এই তীব্র প্রকোপ শুধু বাহিরে নয়, ঘরেও টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তীব্র দাবদাহের উত্তাপ সারাক্ষণ সব জায়গায় অস্বস্তি অনুভূতি দিচ্ছে। গরম এখন মানুষের সহ্য সীমানার বাইরে চলে গেছে। তবে যতই অসহ্য লাগুক না কেন গরমকে মেনে নিয়ে জীবন চালাতে হবে। নিয়মিত কাজ করতে হবে। ঘরে বাইরে সব জায়গায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সারাদিন সকল ক্লান্তি অবসাদ ভুলে এক ফোঁটা শান্তির জায়গার নামই হলো ‘ঘর’। তাই এই গরমে প্রয়োজন ঘরের পর্যাপ্ত স্বস্তি। তবেই মিলবে শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি সাথে শান্তিও।
যত যাই হোক দিন শেষে ক্লান্তি অবসাদ ভুলে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গার নামই হচ্ছে ঘর। তাই সেই ঘরকে যদি একটু প্রাণবন্ত হবে সাজানো যায় তাহলে মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে।
ঘরের স্বস্তির সাথে গাছ ও সবুজ এ দুটি বিষয় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই কিভাবে সবুজে ঘরের স্বস্তি মিলে তা নিয়ে টুকটাক জানা যাক:
হালকা পাতলা ঘর
ঘর আবার হালকা পাতলা হয় নাকি? বিষয়টা হালকা পাতলা ঘর বলতে বোঝানো হয়েছে ঘরে যত কম জিনিসপত্র থাকবে এবং যেখানে সেখানে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে এতে করে ঘরটা বেশ গুছানো লাগবে। বিছানায় অতিরিক্ত বালিশ কিংবা চাদর, ফ্লোরে অতিরিক্ত ম্যাট, জানালায় ভারী পর্দা এগুলো ঘরকে অস্বস্তি দিয়ে থাকে। এছাড়াও গরমের দিনে ফার্নিচার একটি অদল বদল করা দরকার রয়েছে। যেখান দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে সেই জায়গাটা যাতে যতটা সম্ভব খালি এবং খোলামেলা রাখা যায় সেই সব দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
ঘরকে কিভাবে স্বস্তির জায়গা করে তোলা যায়
ইট পাথরের যান্ত্রিক শহরে গাছপালা বৃক্ষরোপণ বিলাসিতার একটি অংশ। চারিদিকে যেখানে শুধু বড় বড় দালান ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না সেখানে গাছের নিচে বসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। যা করা যায় তা হলো ইনডোর প্লান্ট ও ঘরের বারান্দাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। চাইলে ছাদ বাগানো করা যায়। তবে যেহেতু ঘরে স্বস্তি দরকার হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই সবুজের ছোঁয়া থাকা আবশ্যক।
বারান্দায় কিংবা ঘরের খোলামেলা জায়গায় কিছু গাছ লাগানো যায়। এই গাছগুলো থেকে মনে শান্তি লাগবে। ঘরের মধ্যে ভালো থাকে এমন কিছু গাছ এখন সহজে কিনতে পাওয়া যায় এবং সেগুলো খুব সহজেই ঘরের মধ্যেই যত্নে রাখা যায়। তাই সেই সব গাছ সম্পর্কে জানা যাক-
ইনডোর প্ল্যান্ট গাছ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, এসি প্লান্ট নামক বহুল প্রচলিত কিছু গাছ রয়েছে যা এসি রুমে বেচে থাকতে পার। এগুলোর মধ্যে সিলভার কুইন, চায়নিজ পাম, বাঁশ পাতা বা লাকি ব্যাম্বো, ড্রাসিনা, গোলডেন ড্রাসিনা, ক্যাকটাস, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড এবং ফার্ন এর প্রজাতি, পাতাবাহার এর বিভিন্ন প্রজাতি যেমন মানিপ্ল্যান্ট, ক্যালাডিয়াম, বনসাঁই, ফরচুন ট্রি, এরিকা পাম, তুলসি ইত্যাদি রয়েছে। ঘরের বিভিন্ন স্থানে আকার ও উচ্চতা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা যায় এই ধরনের গাছগুলো।
মুক্তার স্ট্রিং
একটি সুন্দর স্ট্রিং অফ পার্লসকে একটি ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। এটি আপনার থাকার জায়গাতে একটি সুন্দর আভা যোগ করতে পারে কারণ এটি ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা যেতে পারে। এই উদ্ভিদের ভাল বৃদ্ধির জন্য ভাল জল এবং উজ্জ্বল, পরোক্ষ আলোর অবস্থার প্রয়োজন।
আরবিকা কফি
আপনি যদি একজন কফি প্রেমী হন, তাহলে একটি অ্যারাবিকা কফি প্ল্যান্ট সেরা অন্দর গাছগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি সুন্দর উদ্ভিদ এবং অত্যন্ত কম রক্ষণাবেক্ষণ। এতে রয়েছে উজ্জ্বল সবুজ পাতা যা বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। তারা নিয়মিত জল এবং মাঝারি পরোক্ষ আলো অবস্থার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
ইংরেজি আইভি
একটি ক্লাসিক ছোট স্থান অন্দর উদ্ভিদ একটি ইংরেজি আইভি। এই গাছটি সহজেই পাত্রে রাখা যায় এবং ছোট ঝুড়ি বা পাত্রে ঝুলানো যায়। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ এবং তাই নিয়মিত ছাঁটাই প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া, সুস্থ ইংরেজি আইভির জন্য স্থির আর্দ্রতা এবং প্রচুর সরাসরি সূর্যালোক বাধ্যতামূলক। এছাড়াও যখন বাতাস আসে তখন এই গাছের পাতাগুলো থেকে ঠান্ডা হাওয়া বেরিয়ে আসে।
পাইলিয়া
ছোট লিভিং রুমের প্রান্তে একটি পাইলিয়া আপনাকে প্রচুর সাহায্য করতে পারে। সেরা অন্দর গাছগুলির মধ্যে একটি। এটিতে অনন্য, গোলাকার পাতা রয়েছে যা ন্যূনতম সাজসজ্জা এবং একটি সাধারণ পাত্রের বিকল্পের সাথে ভাল যায়। এই উদ্ভিদের জন্য জল দেওয়ার পদ্ধতির বিষয়ে সতর্ক থাকুন কারণ এটি পুনরায় জল দেওয়ার আগে মাটি সম্পূর্ণরূপে শুষ্ক হওয়া প্রয়োজন।
স্নেক প্ল্যান্ট
স্নেক প্ল্যান্ট ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে অন্যতম। স্নেক প্ল্যান্ট একটি জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্ট । স্নেক প্ল্যান্ট হলুদ-সবুজ পাতাই এর আসল আকর্ষণ। এটি একটি বলিষ্ঠ পাত্রযুক্ত উদ্ভিদ যার জন্য খুব কম জায়গা প্রয়োজন। এই উদ্ভিদটি ঘরের অনুর্বর কোণগুলির সাথে অত্যন্ত ভালভাবে যায়।
ক্যাকটাস
ঘর বা অফিস এর জন্য সেরা অন্দর গাছগুলির মধ্যে একটি হল ক্যাকটাস। এগুলি বিভিন্ন রঙ, আকার এবং আকারে পাওয়া যায়। তাদের মাঝে মাঝে উজ্জ্বল রঙের ফুল আপনার ঘরে রঙের ছোঁয়া যোগ করতে পারে। ক্যাকটাস কম জলের সহনশীলতার জন্য বিখ্যাত। অতএব, এই জাতীয় উদ্ভিদের যত্ন নেওয়া সহজ।
পিস লিলি
পিস লিলি কে সেরা অন্দর গাছগুলির মধ্যে অন্যতম কারণ এটির যত্ন নেওয়া সহজ। এটি সুন্দর সাদা ফুলে প্রস্ফুটিত হয় যা যেকোনো জীবন্ত স্থানকে মোহিত করতে পারে, তা যত ছোটই হোক না কেন।
তুলসী গাছ
তুলসী গাছ লাগানোর জন্য সর্বোত্তম স্থান যেখানে এটি তার বৃদ্ধি এবং দীর্ঘ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান পেতে পারে। গরমে তুলসী গাছ ভালো ভাবে বড় হয়। তুলসী গাছ সৌন্দর্য্য ও স্বস্তির পাশাপশি অনেক উপকারী।
ছবি সৌজন্য: রিনিশ ডিআইওয়াই নেস্ট বাই ফাহমিদা নিশি