নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে জবিছাত্রীর অভিযোগ, অবিলম্বে বিচার হোক
সাধারণত এবং মূলত শিক্ষাঙ্গনকে জ্ঞানার্জনের প্রাঙ্গণই মনে করা হয়। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যেকার সম্পর্ক হওয়া উচিত পথ-প্রদর্শক ও জ্ঞানপ্রার্থীর। উভয়ের মধ্যেই বিদ্যার আদান-প্রদানই হওয়া উচিত মুখ্য উদ্দেশ্য। অথচ বর্তমানে শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠেছে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের। বাসা-বাড়ি, কর্মস্থল,গণপরিবহনের মতো শিক্ষাঙ্গনও এখন যৌন হয়রানি অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
অতীতেও শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটতো। কিন্তু সে-সব ঘটনা ঘটাতো সাধারণত বখাটেরা। বর্তমানে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠছে খোদ শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েল এক শিক্ষার্থী তার বিভাগীয় এক শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগের পর ওই শিক্ষার্থী এবার সোমবার (১৮ মার্চ) অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন বলে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ২০২১ সালে তার বিভাগের এক শিক্ষক তাকে যৌন হয়রানি করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তৎকালীন উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন। তিনি অভিযোগ তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, কেবল বহিষ্কারের হুমকিই দেননি তারা, তাকে হাত-পা কেটে হত্যারও হুমকি দিয়েছেন বলে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। ওই শিক্ষার্থী আরও অভিযোগ করে জানান, তাকে পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানোসহ স্নাতকের চূড়ান্ত ভাইভায় অকৃতকার্যও দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি এতদিন গণমাধ্যমসহ জনসম্মুখে আসেনি। সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার পর এই শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হন। ভুক্ত শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে ও হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’ ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ডিবির সাইবার টিম।’
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেছেন, ‘অভিযোগটি যখন এসেছিল, তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির বহিঃসদস্য হিসেবে আমিও তদন্ত কমিটিতে কাজ করেছিলাম। প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে বিষয়টি কেন এগুলো না, তা বলতে পারছি না। তবে বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী যখন তার পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে আসে, সেখানে দেখা গেছে বিভিন্ন বিষয়ে এ, এ-মাইনাস, বি গ্রেড পেয়েছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের পেপারে তাকে ফেল দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সাদেকা হালিমের বক্তব্যে স্পষ্ট, শিক্ষার্থীর অভিযোগের ‘প্রাইমাফেসি আর্গুয়েবল কেস’ রয়েছে। সুতরাং বিষয়টিকে তুচ্ছ করে দেখার কিছু নেই। বরং এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত, অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে অপরাধ শনাক্ত করা। এরপর অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো। তবেই শিক্ষাঙ্গনের ভাবমূর্তি বজায় থাকবে। না হলে শিক্ষাঙ্গনে লুকিয়ে থাকা অপরাধীরা আরও আরও যৌন হয়রানি সুযোগ খুঁজতে থাকবে।