Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে খেলাধুলা সম্পর্কে সাবধান!

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে গ্রীষ্মকাল অনেক মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে৷ প্রবল উত্তাপ সামলাতে শরীর হিমসিম খাচ্ছে৷ সেই অবস্থায় শরীর ও মন সুস্থ রাখতে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত৷

খেলাধুলা করে ঘাম ঝরানো ভালো, তবে অনেক শখের ক্রীড়াবিদ উচ্চ তাপমাত্রায় এমনটা করে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তাপমাত্রা স্ট্রেস বাড়ায়৷ সেটা কখনো শরীরের জন্য বাড়াবাড়ি হয়ে ওঠে৷ হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার হিসেবে মাল্টে ইসলাইবের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই দিন আগে আমাদের অ্যামবুলেন্সে এক তরুণ রোগীর চিকিৎসা করতে হয়েছিল৷ তিনি হাঁটা ও দৌড়ানোর পথে অসহনীয় মাথার যন্ত্রণা নিয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন৷ সে ক্ষেত্রে শরীরে ন্যাট্রিয়াম, অর্থাৎ লবণের অভাব ঘটেছিল৷ তাপমাত্রা ও রোগীর শরীরে যথেষ্ট পানীয়র অভাবের কারণে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছিল৷”

তরুণ এই ব্যক্তি সে দিন অত্যন্ত কম পানি পান করেছিলেন৷ অনেক ক্রীড়াবিদ সময় থাকতে শরীরের সতর্কবাণী টের পান না অথবা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না৷ ইসলাইব শরীরের সেই অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘শরীরে তরলের অভাব থেকে সমস্যা শুরু হয়৷ পেশিতে ক্র্যাম্প ধরে, রক্তচাপ আচমকা কমে যায়, তীব্র ক্লান্তির অনুভূতি হয়৷ মানুষের রক্তে লবণের অনুপাতে চরম বিঘ্ন ঘটলে মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার মতো প্রাণনাশক রোগ দেখা দিতে পারে৷ তখন সত্যি মৃত্যুর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷”

উচ্চ তাপমাত্রায় হৃদযন্ত্র ও সার্কুলেশনের উপর যে বিপুল চাপ পড়ে, অনেকেই সেটাকে আমল দেন না৷ সে সময়ে শরীর নিজের মৌলিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার চেষ্টা করে৷ সেই লক্ষ্যে রক্তের একটা বড় অংশ ত্বকে চলে যায়৷

শরীর তখন ঘাম, অর্থাৎ বাষ্পীভবনের মাধ্যমে রক্তের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করে৷ সে সময়ে খেলাধুলার মাধ্যমে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করলে পেশিগুলিরও বাড়তি রক্তের চাহিদা হয়৷ বড় ধমনীগুলিতে রক্তচাপ তখন কমে যায়৷ হৃদযন্ত্রকে আরো দ্রুত পাম্প করে শরীরের অর্গ্যান বা অঙ্গগুলি এবং মস্তিষ্ক সচল রাখতে হয়৷

প্রচণ্ড গরমের সময়ের কিছু সতর্কতা
একই ‘স্পোর্টিং ইন্টেনসিটি’-র ক্ষেত্রে নাড়ির স্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় মিনিটে ১৫ থেকে ২০ বিট বেশি হয়৷ স্বাস্থ্যবান ও ভালোভাবে অনুশীলন করা ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটে৷ ক্রীড়া চিকিৎসাবিদ হিসেবে কারোলিনে ভ্যার্কমাইস্টার মনে করেন, সবাই এমন বাড়তি চাপ সামলাতে পারে না৷ তাঁর মতে, ‘‘স্বাভাবিক মানুষের জন্য সেটা আদৌ কোনো সমস্যা নয়৷ কিন্তু অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ অথবা অন্য কোনো ঝুঁকি থাকলে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷”

কিছু ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়াস বা সার্কুলেটরি কোল্যাপ্স দেখা দিতে পারে৷ বয়স বাড়লে তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা কমতে থাকে৷ শহরের পার্কে বয়স্ক মানুষরা সেটা টের পান৷ তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স সত্তরের উপরে৷ সন্ধ্যাবেলায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলে তাঁরা অনুশীলন শুরু করেন৷

তাছাড়া এমন আবহাওয়ায় তাঁরা সচেতনভাবে কিছুটা কম কসরত করেন৷ তার ফলে শুধু সার্কুলেশনে সুবিধা হয় না, হিট স্ট্রোক থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়৷

হিট স্ট্রোক হলে শরীর শীতল রাখার প্রণালী আর কাজ করে না৷ তাপমাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়৷ এমনকি ৪০ ডিগ্রির বেশিও হতে পারে৷ অথচ মানুষ সেটা টেরই পায় না৷ ডা. ভ্যার্কমাইস্টার বলেন, ‘‘হিট স্ট্রোক আসলে ধাপে ধাপে ঘটে৷ অর্থাৎ আচমকা সেটা আসে না৷ শরীর এমন কিছু সতর্কবাণী দেয়, যা সবারই টের পাওয়া উচিত৷ প্রথমে মাথা ঘোরে, সঙ্গে মাথাব্যথা হয়৷ কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতেও অসুবিধা হয়৷ শেষ পর্যন্ত বিভ্রান্তি, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা পুরোপুরি কথা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাও দেখা দিতে পারে৷”

ডাক্তাররা বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের খেলাধুলার সময়ে অর্ধেক উদ্যোগ নেবার পরামর্শ দেন৷ ডা. ভ্যার্কমাইস্টারের পরামর্শ হলো, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী শরীরের বাইরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন৷ সরাসরি সুর্যের তাপ এড়িয়ে চলুন৷ ভোর বা সন্ধ্যার সময়টা কাজে লাগান৷ যথেষ্ট পানি পান করুন, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়৷ শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য স্থির রাখুন এবং নিজেকে ভালো রাখতে বার বার বিশ্রাম নিন৷”

শহরের পার্কে শরীরচর্চার সময়েও বয়স্ক মানুষগুলি সেটাই করছেন৷ জীবনের এই পর্যায়ে তাঁদের কাছে পারফর্মেন্স বড় কথা নয়৷ মজাই হলো আসল বিষয়৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ